শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের উন্নয়নে সঙ্গী হবে মালদ্বীপ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বাংলাদেশের উন্নয়নে সঙ্গী হবে মালদ্বীপ

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পর্যটন, কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে চায় মালদ্বীপ। পদ্মা, মেঘনা, যমুনাবিধৌত এক বদ্বীপ রাষ্ট্রের উন্নয়ন সঙ্গী হতে চায় ভারত মহাসাগরের সুনীল জলরাশিবেষ্টিত আরেক দ্বীপদেশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুই দেশের পণ্য বাণিজ্য বৃদ্ধি ও জনগণের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি করতে উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তির বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত ৮ ফেব্রুয়ারি দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন। তিনি জানিয়ে গেছেন, শুধু বাণিজ্য নয়, রোহিঙ্গা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো আন্তর্জাতিক ইস্যুতেও বাংলাদেশের পাশে থাকবে মালদ্বীপ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে অন্তত আটটি বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি অন্তত একডজন ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এরমধ্যে দুটি ইস্যুতে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। মালদ্বীপে জনশক্তি রপ্তানি, অবৈধ প্রবাসী কর্মীদের বৈধ করা ও ফেরানোর প্রক্রিয়া ঠিক করে মালদ্বীপের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ সরকার। এ ছাড়া দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে বাংলাদেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমির সঙ্গে মালদ্বীপের ফরেন সার্ভিস ইনস্টিটিউটের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে আরেকটি সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে। কভিড-১৯ ভ্যাকসিন দিতে বাংলাদেশ থেকে ৮০ জন নার্স নেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

সফরে আরও যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তারমধ্যে বিনিয়োগ উন্নয়ন, জনশক্তি রপ্তানি, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল, সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে সহায়তা, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ ইস্যুতে সহায়তা, স্বাস্থ্য খাতে সহায়তা, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সহায়তা, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন সহায়তা, শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সহায়তা, তথ্যপ্রযুক্তি ও কৃষি খাতে সহায়তা বন্দীবিনিময় সহায়তা উল্লেখযোগ্য।

মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ শহিদ এই সফরে এসে বলেছেন, স্বাস্থ্য, ওষুধ, প্রতিরক্ষা ও অন্যান্য কারিগরি বিষয়ে বাংলাদেশের সহযোগিতা আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি। আমাদের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একটি পছন্দের গন্তব্য বাংলাদেশ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সুযোগ থাকা সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের সঙ্গে মালদ্বীপের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক উল্লেখ করার মতো নয়। ধর্মীয় মিল থাকার পরও গড়ে ওঠেনি তেমন কোনো দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা। তবে এবার খোলা মনে সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে দুই পক্ষই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটির সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়নের বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। এমন কি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিবর্ষের আয়োজনে মালদ্বীপের রাষ্ট্রপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি। সম্পর্কের মাত্রাকে অনন্য রূপ দিতে মুজিববর্ষের আয়োজনে অংশ নিতে আগামী মার্চে ঢাকায় আসছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহ।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে মালদ্বীপের একটি ওয়াটার ট্রিটম্যান্ট প্লান্টে আগুন লেগে সেটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ লিটার পানি পাঠানোর নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারের সংশ্লিষ্টরা জানান, দ্বীপদেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়ানোর ওপর সবসময় গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এমন কি করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর গত বছরের মে মাসে দেশটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে বন্ধুপ্রতিম মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের কাছে জরুরি ওষুধ, চিকিৎসা ও নিরাপত্তাসামগ্রী পাঠানোর উদ্যোগ নেন। ২০ হাজার পিপিই সেট, ৫ হাজার হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ৯৬০টি নিরাপত্তা চশমা ও ৪০ কার্টন জরুরি ওষুধ ছাড়াও সেই সময় প্রায় ৮৫ টন খাদ্যসামগ্রী পাঠানো হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত নভেম্বরে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টেলিফোনে আলোচনা করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়ানোর ক্ষেত্রে ঐকমত্যে পৌঁছান। ওই টেলি বৈঠকের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, বাংলাদেশ থেকে পলিমাটি আমদানি করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে মালদ্বীপ।  দুই দেশের মধ্যে উপকূলীয় জাহাজ চলাচলের বিষয়েও ঐকমত্য এসেছে।

সর্বশেষ খবর