সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

পাইলটের যত কান্ড

রকমারি ডেস্ক

পাইলটের যত কান্ড

বিমান দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটন করতে গিয়ে তদন্তকারীরা অবাক করা  সব তথ্য বের করে আনেন। কখনো জানা যায়, পাইলটের ভুল ও ইচ্ছাকৃত কারণেও ঘটেছে দুর্ঘটনা। এসব নিয়েই আজকের রকমারি-

 

ইজিপ্ট এয়ার ফ্লাইট ৯৯০

১৯৯৯ সালের ৩১ অক্টোবর ২০৭ জন যাত্রী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস বিমানবন্দর থেকে মিসরের কায়রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করে ইজিপ্ট এয়ার ফ্লাইট-৯৯০ বোয়িং-৭৬৭। বিমানটি উড্ডয়নের অল্প সময়ের মধ্যে আটলান্টিক মহাসাগরে বিধ্বস্ত হয়। এ দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ১০০ পর্যটক মারা যান। দুর্ঘটনাটি আন্তর্জাতিক সীমারেখায় হওয়ায় ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশনের অনুমতি নিয়ে তদন্ত শুরু করে ইজিপ্টশিয়ান সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি (ইসিএএ)। কিন্তু সংস্থাটির কিছু সীমাবদ্ধতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ডের (এনটিএসবি) কাছে তদন্তভার হস্তান্তর করা হয়। ঘটনার দুই সপ্তাহ পর এনটিএসবি তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে বলেন, ঘটনা যতটা না দুর্ঘটনা তার থেকে বেশি ইচ্ছাকৃত। মিসরীয় কর্তৃপক্ষ এ তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে নিজেরা তদন্ত শুরু করে। অন্যদিকে এনটিএসবি কর্তৃপক্ষও তাদের তদন্ত অব্যাহত রাখে। পরবর্তী সময়ে এনটিএসবি জানায়, দ্য রিলিফ ফার্স্ট অফিসার জামিল আল বয়াতি ইচ্ছাকৃতভাবে এ দুর্ঘটনা ঘটান। কিন্তু ইসিএএ তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে বলে, ইচ্ছাকৃত নয় বিমান উড্ডয়নের পর নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটে। কিন্তু পরবর্তীতে ব্ল্যাক বক্সে পাওয়া তথ্য অধিকতর বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিমান উড্ডয়নের ২০ মিনিটের মাথায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এ কাজে বিমানের পাইলট ইচ্ছা করেই বিমানটিকে আটলান্টিক মহাসাগরে বিধ্বস্ত করেন।

 

রহস্যের আরেক নাম মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস ফ্লাইট ৩৭০

২০১৪ সালের ৮ মার্চ মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস পরিচালিত বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর বিমানটি কুয়ালালামপুর থেকে উড্ডয়নের ঘণ্টাখানেক পর নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। বিমানটিতে মোট ২৩৯ জন আরোহী ছিলেন। এর একদিন আগে ১৫ মার্চ, মালয়েশিয়ান প্রধানমন্ত্রী নাজিব আবদুল রাজাক এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন এবং তিনি স্যাটেলাইট এবং রাডার তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বলেন, বিমানটি কেউ ভেবেচিন্তে রাডার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। তিনি বলেন, বিমানটি দিক পরিবর্তন করে মালয়েশিয়ার ওপর দিয়েই ভারতের দিকে অগ্রসরের চেষ্টা করে। বিমানের ভিতরে অবস্থানরত যে কেউ কান্ডটি ঘটিয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার পর সম্ভবত আরও ৭ ঘণ্টা আকাশে উড়েছিল। পরদিন মালয়েশিয়া এয়ারলাইনস ঘোষণা দেয়, সোবাং এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের রাডার স্ক্রিন থেকে বিমানটি উধাও হওয়ার আগে এর কোনো কর্মী বা বিমানে অবস্থানরত কোনো যাত্রীর কাছ থেকেই কোনো ধরনের বিপদ সংকেত, খারাপ আবহাওয়া অথবা যান্ত্রিক ত্র“টির খবর পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ ভিতরে কোনো একজন বিমানটির দিক পরিবর্তন করে।

 

দরজা বন্ধ অন্য পাইলটকে  ককপিটে ঢুকতে দেয়নি

জার্মানির জার্মান উইংসের এ-৩২০ এয়ারবাসটি ২০১৫ সালে স্পেনের উপকূলীয় শহর বার্সেলোনা থেকে জার্মানির ডুসেলডর্ফ শহরে যাওয়ার পথে আল্পস পর্বতমালার ফরাসি অংশের একটি দুর্গম এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। জার্মান উইংসের বিমানটি বিধ্বস্তের ঘটনায় ছয়জন ক্রুসহ ১৫০ আরোহীর সবাই নিহত হন। আরোহীদের মধ্যে ৬৭ জন জার্মান এবং ৪৫ জনের মতো স্পেনিশ নাগরিক ছিলেন। বিধ্বস্ত বিমানটি থেকে উদ্ধারকৃত ব্ল্যাকবক্সের তথ্য থেকে জানা যায়, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ১০ মিনিট আগে বিমানটির পাইলট ককপিট থেকে বেরিয়ে যান, সম্ভবত টয়লেটে যাওয়ার জন্য। এ সময় ২৮ বছরের কো-পাইলট আন্দ্রিয়াস লুবিৎস ককপিটে ছিলেন একা এবং ককপিটের দরজা বন্ধ ছিল। পাইলট বাইরে থাকা অবস্থায় তিনি ইচ্ছা করেই বিমানটি নিচের দিকে নামাতে থাকেন। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার থেকে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাতে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পাইলট টয়লেট থেকে ফিরে এসে ককপিটের দরজায় অনেকবার আঘাত করলেও কো-পাইলট দরজা খোলেননি। তিনি আরও জানান, ফ্লাইট রেকর্ডারে বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ায় আগ মুহূর্ত পর্যন্ত কো-পাইলটের স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ পর্যন্ত শোনা গেছে।

 

কনিলান এয়ার ডিজাস্টার

এটি ছিল একটি আত্মঘাতী বিমান হামলা। অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের অ্যালিস স্প্রিরিঞ্জ বিমানবন্দরের এ হামলাটি চালান কনিলান এয়ারওয়েজের সাবেক বহিষ্কৃত কর্মকর্তা। ১৯৭০ এর দশকে তিনি যুক্তরাজ্য থেকে অস্ট্রেলিয়ায় দেশান্তর হন। কিন্তু তার অস্ট্রেলিয়ায় আগমন শুভ হয়নি। এ কারণে ইংল্যান্ডে ফিরে যেতে ১৯৭৪ সালে তিনি একটি কোয়ান্টাস টিকিট জাল করেন। তবে তার প্রতারণাটি ধরা পড়ে যাওয়ায় আর বাড়ি ফেরা হয়নি। এরপর ১৯৭৫ সালে তিনি একটি বাণিজ্যিক পাইলটের লাইসেন্স লাভ করতে সক্ষম হন। পরের বছরের জানুয়ারিতে কনিলানের বিমান চালানো শুরু করেন। কিন্তু বিমান কর্তৃপক্ষ তার টিকিট জালিয়াতির বিষয়টি জানতে পেরে তাকে চাকরিচ্যুত করে। এরপর উইন্ডহামের অর্ড এয়ার চার্টারে যোগদান করেন। কিন্তু সেখানেও তার চাকরি চলে যায়। তিনি ধারণা করেন, কনিলান বিমান কর্তৃপক্ষের প্রধান রজার্স কনিলান টিকিট জালিয়াতির বিষয়টি অর্ড এয়ার চার্টার কর্তৃপক্ষকে অবহিত করায় তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে তিনি আর কোনো চাকরি জোগাড় করতে না পেরে কথা অনুযায়ী কাজটি সেরে ফেলেন। এ জন্য প্রথমে তিনি উইন্ডহামে ফিরে যান এবং সেখানকার বিসক্রাফট ব্যারন নামে দুই ইঞ্জিনচালিত একটি বিমান ছিনতাই করেন। ছিনতাইকৃত ওই বিমানটি নিয়ে তিনি কনিলান বিমান কমপ্লেক্সে আঘাত হানেন।

 

রয়েল এয়ার মারক

উড্ডয়নের ১০ মিনিটের মধ্যে আগাদির উত্তরাঞ্চলের অ্যাটলাস পর্বতে বিধ্বস্ত

১৯৯৪ সালের ২১ আগস্ট রয়েল এয়ার মারক জেট বিমানটি আগাদির আল মাসিরা বিমানবন্দর থেকে ক্রুসহ ৪৪ জন যাত্রী নিয়ে মরক্কোর বিখ্যাত শহর ও বন্দরনগরী কাসাব্লাঙ্কা যাচ্ছিল। কিন্তু ঘটনাস্থল থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে উড্ডয়নের ১০ মিনিটের মধ্যে আগাদির উত্তরাঞ্চলের অ্যাটলাস পর্বতে বিধ্বস্ত হয়। এতে বিমানে থাকা ৪৪ জন যাত্রীর সবাই মারা যান। পরবর্তীতে তদন্তে জানা যায়, পাইলট ইউনুস কয়াতি ইচ্ছাকৃতভাবে বিমানটি বিধ্বস্ত করেন। এ ছাড়া বিমানের পাইলটের শেষ শব্দটি নিয়ে তদন্তকারী দল তদন্ত করেন। শব্দ বিশ্লেষণ করে তারা নিশ্চিত হন, পাইলট ইচ্ছা করেই বিমানটি বিধ্বস্ত করেছেন। ওটা ছিল পাইলটের আত্মহত্যাবিষয়ক শব্দ।

 

পাইলট ইচ্ছা করেই বিমানটি বিধ্বস্ত করেন

দিনটি ছিল ২০১৩ সালের ২৯ নভেম্বর, সেদিন আকাশে উড়ে মোজাম্বিক এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ৪৭০। কিন্তু মাঝপথে বিমানটি নামিবিয়ার উত্তরাঞ্চলের বুবোটা বিমানবন্দরের কাছে বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনায় মোজাম্বিকের ১০, অ্যাঙ্গোলার ৯, পর্তুগালের ৫ এবং ফ্রান্স, ব্রাজিল ও চীনের একজন করে মোট ২৭ জন যাত্রী ও দুই পাইলটসহ ছয়জন কেবিন ক্রু মারা যান। পরবর্তীতে দুর্ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করার জন্য দুর্ঘটনাকবলিত স্থান থেকে উদ্ধারকৃত ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (সিভিআর) ও দ্য ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার (এফডিআর) উদ্ধার করে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ডে (এনটিএসবি) পাঠানো হয়। দ্য মোজাম্বিক্যান সিভিল অ্যাভিয়েশন ইনস্টিটিউশনের প্রধান জোয়া অ্যাব্রিউ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। তদন্তে দেখা গেছে, পাইলট ইচ্ছা করেই বিমানটি বিধ্বস্ত করেন। তদন্তকারীদের মতে,  ফ্লাইটের রেকর্ড থেকে জানা যায়, ফ্লাইটটি বিধ্বস্ত করার পেছনে পাইলটের ইচ্ছা কাজ করেছিল। ক্যাপ্টেন হার্মিনিও ডস সান্তোস ফার্নান্দেজ স্বপ্রণোদিত হয়েই বিমানটি বিধ্বস্ত করেন। অন্য পাইলটরা ককপিটে আটকা পড়েছিলেন এবং বার বার ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন। তারা দরজায় সজোরে আঘাতও করেছিলেন।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর