বৃহস্পতিবার, ১৮ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

শীর্ষ ধনীদের কার কোন ব্যবসা

শীর্ষ ধনীদের কার কোন ব্যবসা

তারা সবাই শীর্ষ ধনী। শত শত বিলিয়ন ডলারের মালিক তারা। বলা হয়ে থাকে, তাদের হাতে বিশ্বের অর্ধেক সম্পদ। তবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ কিন্তু তাদের হাতেই। ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি, রকেট ব্যবসা, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, অনলাইন মার্কেট, টেলিকম ব্যবসা ছাড়াও কত ধরনের ব্যবসা তাদের রয়েছে সেসব জানলে অবাক হতে হয়। তারা প্রত্যেকেই ব্যবসায়ী টাইকুন।  শীর্ষ ধনীরা কে কোন ব্যবসা থেকে গড়লেন টাকার পাহাড়- সেসব নিয়ে আজকের রকমারি। লিখেছেন- আবদুল কাদের

 

অভিজাত পোশাক, পারফিউমসহ বিলাসী পণ্যের ব্যবসা তার

ফরাসি নাগরিক বার্নার্ড আর্নল্ট হলেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিলাসবহুল পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এলভিএমএইচের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও চেয়ারম্যান। এলভিএমএইচের বিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে লুই ভিটন, হেনেসি, মার্ক জ্যাকবস, ক্রিশ্চিয়ান ডিওর, টিফানি অ্যান্ড কোম্পানি এবং সেফোরা। ১৯৮৭ সালে আর্নল্ট এলভিএমএইচ গড়ে বিলাসী পণ্যের বাজারে প্রবেশ করেন। এ কোম্পানিটিকে গড়ে তোলার পাশাপাশি তিনি অনেক কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স-এর তথ্য অনুযায়ী, আর্নল্ডের বেশির ভাগ সম্পদ আসে ক্রিশ্চিয়ান ডিওরের অংশীদারিত্ব থেকে; এটি এলভিএমএইচের ৪১.৪ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ক্রিশ্চিয়ান ডিওরের ৯৭.৫ শতাংশ মালিকানা বা শেয়ারের মালিক বার্নার্ড আর্নল্ট ও তাঁর পরিবার। এ ছাড়াও ওয়াইন, শ্যাম্পেন থেকে হাতঘড়ি, গয়না, কসমেটিক্স বা চামড়াজাত দ্রব্য; সব ধরনের বিলাসবহুল পণ্য বিক্রি করে আর্নল্টের প্রতিষ্ঠান। অন্যান্য সম্পদের মধ্যে রয়েছে ৩২.৩ বিলিয়ন ডলারের মোয়েলিস অ্যান্ড কোম্পানি। জীবনে আর্নল্ট তার বাবার নির্মাণ সংস্থা ফেরেট-সাভিনেলে কাজ করতেন। এখানে তার প্রথম ব্যবসায়িক হাতেখড়ি। ১৯৭১ সালে কোম্পানির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৯ সালে একে ফেরিনেল ইনকরপোরেটেড নামের রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে রূপ দেন। ১৯৮৪ সালে আর্নল্ট বিলাসী পণ্যের বাজারে বিনিয়োগ করেন। অবশেষে ক্রিশ্চিয়ান ডিওর এবং লে বন ছাড়া সব সম্পদ বিক্রি করে দেন এবং ১৯৮৭ সালে এলভিএমএইচে বড় বিনিয়োগ করেন। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্সের তথ্যমতে, বর্তমানে তার মোট সম্পদের পরিমাণ ২২২.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 

ইলন মাস্কের আছে বৈদ্যুতিক গাড়ি ও রকেট ব্যবসা

ইলন মাস্ক বিশ্বের অন্যতম সেরা ধনকুবের। জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায়। রোবট, সৌরশক্তি, ক্রিপ্টোকারেন্সি ও জলবায়ু তার আগ্রহের বিষয়। পেনসিলভানিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর হওয়ার আগে কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন ইলন মাস্ক। এখানে পদার্থবিদ্যা এবং অর্থনীতিতে ডিগ্রি অর্জন করেন। বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা ও মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেস এক্সের মতো বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। টেসলা, পেপ্যালসহ বেশ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইলন মাস্কের নাম। অর্থ আদান-প্রদানের জনপ্রিয় মাধ্যম পেপ্যালের এই সহ-প্রতিষ্ঠাতা সবচেয়ে দ্রুতগতির হাইপারলুপ নামক কল্পিত উচ্চগতিসম্পন্ন পরিবহন ব্যবস্থারও উদ্ভাবক। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ইলন মাস্কের সম্পদ কলম্বিয়া, ফিনল্যান্ড, পাকিস্তান, চিলি ও পর্তুগালের মতো দেশের জিডিপির চেয়ে বেশি। ফোর্বসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মাস্ক সম্পদ আহরণের দিক দিয়ে নতুন সীমায় নিয়ে গেছেন নিজেকে। তবে ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে মাস্ক বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তির তালিকায় নেমে এসেছেন। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১৮৭.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। জানা গেছে, টেসলার বদৌলতে বছরজুড়েই ইলন মাস্কের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। সৌরশক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছেন ইলন মাস্ক। এমন এক গাড়ি নির্মাণ করেছেন যাতে গ্যাসের দরকার পড়ে না, চালক না থাকলেও চলে। এ ছাড়াও রকেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সে এবং আরও কয়েকটি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের মালিকানা রয়েছে তার। তবে সম্প্রতি তাকে টপকে বিশ্বের ধনীর তকমা অর্জন করেছেন শীর্ষ ধনকুবের বার্নার্ড আর্নল্ট। যদিও এটাই প্রথম নয়। এর আগে ২০২১ সালেও মাস্ক একই রকমভাবে দুই নম্বরে নেমে গিয়েছিলেন। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার্স ইনডেক্স অনুযায়ী, টুইটার-সংক্রান্ত নানা গোলযোগে মাস্কের প্রায় ১০ কোটি ডলার লোকসান হয়েছে। যার ফলে তালিকায় প্রথম স্থান থেকে আচমকা ছিটকে যেতে হয়েছে তাকে। আর গেল বছরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ইলন মাস্ক আরও একটি নজির গড়েছিলেন। তা হলো- সম্পদ খোয়ানোর নজির। গেল বছর ইলন মাস্ক প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলার খুইয়েছেন।

 

অনলাইন মার্কেট পুরোটাই তার দখলে

১৯৯৪ সালে আমেরিকায় অ্যামাজনডটকম প্রতিষ্ঠা করেন জেফ বেজোস। এখন তিনি অ্যামাজনের চেয়ারম্যান। বেজোস মূলত ডেভিড ই শ-এর কাছ থেকে অনলাইন ব্যবসার ধারণা পেয়েছিলেন। ডেভিড ই শ ছিলেন তার প্রাক্তন বস। সেই ধারণা থেকেই অনলাইন শপ অ্যামাজনের উত্থান। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ারস ইনডেক্স অনুযায়ী, জেফ বেজোসের মোট সম্পদের পরিমাণ ১২৫.১ বিলিয়ন ডলার। তবে তার এই বিপুল সম্পদের উৎস কী তা জানেন? ই-কমার্স কোম্পানি অ্যামাজন। জানা গেছে, ১৯৯৮ সালের পর থেকে বেজোসের সম্পদ বেড়েছে। অ্যামাজন মূলত অনলাইনে বই বিক্রি দিয়ে শুরু করেছিল। তারপর থেকে এটি এক ছাদের নিচে সব অর্থাৎ একটি ওয়ান-স্টপ শপে পরিণত হয়েছে। শীর্ষ এই ধনকুবেরের ব্যক্তিগত সম্পদের বেশির ভাগই অ্যামাজনের শেয়ার; যা তার সম্পদ ৯০ শতাংশ বাড়াতে অবদান রেখেছে। বাকি ১০ শতাংশের উৎস- স্পেস কোম্পানি ব্লু অরিজিন এবং শীর্ষ গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট। ইন্টারনেটে পুরনো বই বিক্রি থেকে শুরু করে পৃথিবীর প্রথম ‘ট্রিলিয়ন ডলার কোম্পানি’ হয়েছে তার অ্যামাজন। ২০২৪ সালের মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম খুচরা বিক্রেতা হিসেবে ওয়ালমার্টকে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। করোনার আঘাত থেকে মুক্তি পায়নি অ্যামাজনও। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময়ে ২.১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নিট সম্পদ হারিয়েছেন এই মার্কিন উদ্যোক্তা।

 

সফটওয়্যার ব্যবসা করে হয়েছেন শীর্ষ ধনী

১৩ বছর ধরে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর স্থানটি নিজের করে রেখেছিলেন সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিদের একজন তিনি। দাতব্য সংস্থা বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতাও বিল গেটস। তার হাত ধরেই আধুনিক বিশ্ব দেখে কম্পিউটিং সফটওয়্যার মাইক্রোসফট। ১৯৭৫ সালে বিল গেটস ও পল এলেন একসঙ্গে ‘মাইক্রোসফট’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮০ সালে তারা তৈরি করেন অপারেটিং সফটওয়্যার এমএস-ডস। তাদের অপারেটিং সিস্টেম বাজারে ব্যবহারকারীদের মধ্যে আস্থা তৈরি করে। অল্প সময়ে তারা মাইক্রোসফট উইন্ডোজ বাজারে ছাড়েন। ব্যাপক সাড়া ফেলে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ।

১৯৮৬ সালে প্রথমবারের মতো পুঁজিবাজারে জায়গা করে নেয় মাইক্রোসফট। ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠানটি অপারেটিং সফটওয়্যারের পাশাপাশি নিজেদের বাণিজ্য প্রসারে একের পর এক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান নিয়ে আসে। ২০০০ সালে মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান বিল গেটস। তত দিনে সাফল্যের আকাশ ছুঁয়েছে মাইক্রোসফট। বিল গেটস হয়ে ওঠেন বিশ্বসেরা ধনী। ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকায় আছেন পঞ্চম স্থানে। করোনা প্রাদুর্ভাবের ভিতরেও প্রযুক্তি খাতের এই মার্কিন উদ্যোক্তার নিট সম্পদ বেড়েছে ৫৮৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্সের তথ্যমতে, বর্তমানে তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১০৯.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 

৬০টিরও বেশি ব্যবসা  আছে ওয়ারেন বাফেটের

সর্বকালের সেরা বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট। তিনি প্রখ্যাত জনহিতৈষী ব্যক্তি। তার সম্পদের ৯৯ শতাংশ জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য দান করবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্সে শীর্ষ ছয়ে রয়েছেন তিনি। তার প্রথম শেয়ারটি কেনেন ১১ বছর বয়সে। ১৯৪৪ সালে ১৪ বছর বয়সে তার প্রথম ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করেন। বাফেট এক সময় হকারের কাজ করতেন। সংবাদপত্র, বই বিক্রি করতেন। এমনকি কাজ করেছেন মুদি দোকানেও। সেখান থেকে ব্যবসার পথচলা। ধীরে ধীরে বনে যান বিশ্বের সেরা বিনিয়োগকারী। তিনি বার্কশায়ার হ্যাথওয়ে, বীমা কোম্পানি জিকো, ব্যাটারি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডুরসেল ও ডেইরি কুইনের মতো ৬০টি প্রতিষ্ঠানের মালিক। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্সের তথ্যমতে, তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১০৯.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 

রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় বাদশাহ তিনি

১৯৪০ সালে মেক্সিকোয় জন্ম নেওয়া কার্লোস স্লিম হেলু বিশ্বের অন্যতম সেরা ধনকুবের। লাতিন আমেরিকার টেলিকম কোম্পানি আমেরিকা মোবাইল নিয়ন্ত্রণ করেন স্লিম। ১৯৯০ সালে মেক্সিকোর ফোন কোম্পানি টেলমেক্সের অংশীদারিত্ব কিনে নেন। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সময়টা ছিল তার জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে তিনি চুক্তিবদ্ধ হন ফ্রান্স টেলিকম এবং সাউথ ওয়েস্টার্ন বেল করপোরেশনের সঙ্গে। এ ছাড়াও স্লিম রিয়েল এস্টেট, ভোগ্যপণ্য, খনি উত্তোলনসহ নানা ব্যবসায় সম্পৃক্ত। এক সময় তিনি দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এ ১৭ শতাংশ শেয়ারের মালিক ছিলেন। স্লিম এবং তার পরিবার লাতিন আমেরিকার অন্যতম বৃহত্তম গ্রুপ গ্রুপো কার্সোর ৭৯ শতাংশ শেয়ারের মালিক। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্সের তথ্যমতে, তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৯৩.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 

গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজের টাকার পাহাড়

কম্পিউটার বিজ্ঞানী ল্যারি পেজ। তালিকায় থাকা অন্যান্যদের মতো ল্যারি পেজও একটি ছাত্রাবাসে তার খ্যাতির পথে যাত্রার সূচনা করেছিলেন। ১৯৯৫ সালে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় পেজ ও তার বন্ধু সের্গেই ব্রিন ইন্টারনেট ডেটা উন্নত করার ধারণা নিয়ে আসেন। ১৯৯৮ সালে তিনি ও সের্গেই ব্রিন মিলে প্রতিষ্ঠা করেন সার্চ ইঞ্জিন গুগল। ল্যারি পেজ হলেন পেজ র‌্যাংকের উদ্ভাবক। তা গুগলের সার্চ র‌্যাংকিং এলগরিদম হিসেবে বেশি পরিচিত। পেজ ২০০১ সাল পর্যন্ত কোম্পানির প্রধান নির্বাহী (সিইও) হিসেবে কাজ করেছিলেন। আবার ২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কোম্পানির প্রধান নির্বাহী ছিলেন তিনি। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্সে শীর্ষ দশে আছেন গুগলের এই সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী ল্যারি পেজের মোট সম্পদের পরিমাণ ৯৩.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 

প্রযুক্তি ব্যবসা করে ল্যারি এলিসনের বড় বিনিয়োগ

সফটওয়্যার কোম্পানি ওরাকলের সহ-প্রতিষ্ঠা ল্যারি এলিসন। এক সময় আমেরিকার এমডাল করপোরেশনে ডাটাবেজ তৈরির কাজ করতেন। সে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ১৯৭৭ সালে গড়ে তোলেন সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ল্যাবরেটরি। পরবর্তীতে এর নাম রাখা হয় ওরাকল। সেই ওরাকলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, সিইও এবং প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ল্যারি এলিসন। ১৯৯০ সালে ওরাকল করপোরেশন দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। সে সময় ল্যারি নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ওরাকলকে নিয়ে আসেন শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের তালিকায়। আর ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে তিনি এটি পরিচালনা করেন। ওরাকল হলো- বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সফটওয়্যার কোম্পানি, যা বিভিন্ন ধরনের ক্লাউড কম্পিউটিং প্রোগ্রামের পাশাপাশি জাভা ও লিনাক্স কোড এবং ওরাকল এক্সডাটা কম্পিউটিং প্ল্যাটফরম প্রদান করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ওরাকল বেশ কিছু বড় কোম্পানি কিনে নেয়। এদের একটি ছিল সান মাইক্রোসিস্টেম। এটি তারা কেনে ২০১০ সালে। ২০১২ সালে এলিসন হাওয়াইয়ের দ্বীপ লানাই কিনে নেন ৩০ কোটি ডলারের বিনিময়ে। ২০২০ সালে তিনি ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ওই দ্বীপে চলে যান। এলিসন টেসলাতেও বিনিয়োগ করেন। ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত তিনি বৈদ্যুতিক গাড়ি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্সের তথ্যমতে, ল্যারি এলিসনের মোট সম্পদের পরিমাণ ১২০.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 

টেলিকম, জ্বালানিসহ অনেক ব্যবসা তার

ভারতের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ৬৬ বছর বয়সী মুকেশ আম্বানি। স্কুলশিক্ষক বাবার পরিবারে ছেলেবেলা কেটেছে অভাব-অনটনে। পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে মুকেশ আম্বানি নেমে পড়েন কর্মের সন্ধানে। পাড়ি জমান ইয়েমেনের বন্দরনগরী এডেনে। সেখানে একটি তেল কোম্পনিতে ৩০০ রুপির বিনিময়ে কাজ শুরু করেন। কাজ ছিল গ্যাস ভরা ও অর্থ আদায় করা। চাকরি করার সময় ভালোভাবে রপ্ত করেন তেলের ব্যবসা। এরপর চলে আসেন মাতৃভূমি ভারতে। একমাত্র এশীয় হিসেবে তিনি আছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায়। আশির দশকের শুরুর দিকে পারিবারিক ব্যবসায় হাতেখড়ি হয় মুকেশ আম্বানির। ১৯৮০ সালে একজন ক্ষুদ্র বস্ত্রকলের মালিক হিসেবে তিনি সুতার ব্যবসা শুরু করেন। তিলে তিলে গড়ে তোলেন ভারতীয় শীর্ষ এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার ৪০ কোটি ডলারের ব্যবসা করা এই কোম্পানি চালান তিনি। তার ব্যবসা রয়েছে পেট্রকেমিক্যাল, তেল ও গ্যাস, টেলিকম ও খুচরা পণ্য বিক্রয় খাতে। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের মালিকানায় রয়েছে নেটওয়ার্ক ১৮, ফোর্বস মিডিয়ার লাইসেন্স এবং নিউইয়র্কের ম্যান্ডারিন অরিয়েন্টাল হোটেল। রিলায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা তার পিতা ধীরুভাই আম্বানি। ২০০২ সালে পিতার মৃত্যুর পর আম্বানি এবং তার ছোট ভাই অনিল পারিবারিক ব্যবসা ভাগ করে নেন। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্সের তথ্যমতে, তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৮৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 

মাইক্রোসফট তাকে করে বিশ্বের অন্যতম ধনী

মাইক্রোসফটের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্টিভ বলমার। তিনি ১৯৮০ সালে মাইক্রোসফটের ব্যবসা ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগদান করেন। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে বিল গেটসের সঙ্গে একই ক্লাসে পড়তেন তিনি। একই তলায় থাকতেন দুজন। এরপর দুজন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পরিচালনা করেন মাইক্রোসফট কোম্পানি। বলমার ছিলেন মাইক্রোসফটে বিল গেটসের নিয়োগকৃত ৩০তম কর্মী। তাকে প্রথমে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার বেতনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। একই সঙ্গে কোম্পানিতে মালিকানার কিছু অংশও দেওয়া হয়। ১৯৮১ সালে যখন মাইক্রোসফট ইনকরপোরেটেড হয়, তখন তার শেয়ারের পরিমাণ ছিল ৮ শতাংশ। তিনি মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন ২০০০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত। এ ছাড়া মাইক্রোসফটের হয়ে ২০১১ সালে বলমার ৮.৫ বিলিয়ন ডলারে স্কাইপ কেনার তদারকি করেছিলেন। বলমার মাইক্রোসফটের আনুমানিক ৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক, যা তাকে বৃহত্তম এই সফটওয়্যার জায়ান্টের ব্যক্তিগত শেয়ারহোল্ডার করে তোলে। মাইক্রোসফট থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি ২০০ কোটি ডলারের বিনিময়ে লস অ্যাঞ্জেলেস ক্লিপারস বাস্কেটবল কিনে নিয়েছিলেন। যে কোনো এনবিএ টিমের জন্য ওই দাম ছিল সেই সময়ের একটি রেকর্ড। ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনীর তালিকায় দশম অবস্থানে আছেন স্টিভ বলমার। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্সের তথ্যমতে, তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৯১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

সর্বশেষ খবর