ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়ার সাবেক বিমান বাহিনীর মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার আবু বকর সিদ্দিকীর ছেলে প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান (২৯)। ১৯ জুলাই রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত হন। তিনি বন্ধু পিয়াসের সঙ্গে এই আন্দোলনে যোগ দেন। আন্দোলনকারীদের পানি পান করাতেন। ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে মিরপুর ১০ নম্বর সেক্টর এলাকায় পথচারী এক নারীকে বাঁচাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন রাকিবুল। মিরপুর-৬ এলাকায় ডা. আজমল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রাকিবুল লন্ডনভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি টাইগার রিস্ক ম্যানেজমেন্টে চাকরি করতেন। রাকিবুলের ব্যবহারিক জিনিসপত্র নিয়ে ক্যান্সার আক্রান্ত মা হাফিজা খাতুন বারবার মূর্র্ছা যাচ্ছেন। পিতা আবু বকর সিদ্দিক বাকরুদ্ধ। বড় ভাইয়ের ছেলে ছোট শিশু রাফসান সারা ঘর খুঁজে বেড়াচ্ছেন চাচাকে। মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে রাকিবুলের সঙ্গে ছোট ভাজিতা রাফসানেরও কথা হয়েছিল। নিহত হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে প্রকৌশলী রাকিবুল হাসানের সঙ্গে কথা হয় মা হাফিজার। বলেছিলেন, তিনি একটি গ্যারেজের মধ্যে বসে আছেন। রাত সাড়ে ৯টার মধ্যে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর তার ছেলে চিরঘুমে শায়িত হন। এশার নামাজ পড়ে ফোন দেন পিতা আবু বকর। কিন্তু ফোন বাজলেও কেউ ধরেনি। রাত ১১টার দিকে ছেলের ফোন থেকে কেউ একজন মৃত্যুর খবর জানান। ভোররাতে রাকিবুলের বন্ধু ফয়সাল ও পিয়াস লাশ ঝিনাইদহ শহরে পৌঁছে দেন। মা হাফিজা বেগম জানান, তার ছোট ছেলেকে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল। রাকিবুল ঢাকায় মিলিটারি ইনস্টিটিউট সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে দুই বছর ধরে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করছিলেন। মা-বাবাকে কাছে রাখার জন্য ঢাকায় বড় একটি ফ্ল্যাটও নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল তার। প্রতিবেশী তাছলিম উদ্দীন জানান, ভদ্র পরিবারের সন্তান হিসেবে সবাই রাকিবকে চিনতেন। তার মৃত্যুতে শহরের চাকলাপাড়া ও হরিণাকুন্ডু উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের মানুষ শোকে স্তব্ধ। মৃত্যুর পরও সরকারিভাবে পরিবারটির কেউ খোঁজ নেননি বলে জানান রাকিবের পিতা আবু বকর।
সাব্বিরের পরিবারে কান্না থামছে না : সাব্বির পেশায় একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। সে শৈলকুপা উপজেলার মির্জাপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের আহমদ আলী মণ্ডলের বড় ছেলে। ১৮ জুলাই বিকালে ঢাকার উত্তরায় তার কোম্পানির মালিকের স্ত্রী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাহমিনা রহমানের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের পানি ও জুস সরবরাহ কাজে নিয়োজিত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পরদিন তার লাশ মির্জাপুর গ্রামে দাফন করা হয়। পিতা আহমদ আলী মণ্ডল বলেন, তার ছেলে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় গিয়েছিল চাকরি করতে। তাকে কেন গুলি করে মারা হলো? তার মৃত্যুতে গোটা পরিবার এখন অসহায়।