বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ০০:০০ টা
ফলোআপ

জাবির সেই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন!

জাবির সেই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন!

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আবাসিক হলে ছাত্রীর সঙ্গে রাত যাপনের ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মহিতোষ রায় টিটোর বিরুদ্ধে এখনও কোন ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে টিটুকে সাংগঠনিকভাবে বহিষ্কারের সুপারিশ করলেও প্রশাসন এখনও নীরব। উল্টো ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।

টিটোর বিরুদ্ধে একাধিক অপকর্মের অভিযোগ থাকলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে অপরাধের প্রশ্রয়দাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে বারবার। ঘটনার আগের দিন বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বৃদ্ধ রিকশা চালকসহ দুই নিরাপত্তা কর্মীকে ব্যাপক মারধর করে ছাত্রলীগের উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক বশিরুল হক এবং অভিযুক্ত মহিতোষ রায় টিটো। এ বিষয়েও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। নিরাপত্তা কর্মীরা বিচার চাইলে উল্টো প্রক্টর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ছাত্রলীগে নেতাদের পক্ষে সাফাই দেন।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক, অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীদের মারধর, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় হলের সিনিয়র শিক্ষার্থীকে মারধর এবং হলে মাদক সরবরাহের অভিযোগ থাকলেও এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। প্রশাসনের এমন প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকায় উন্মত্ত হয়ে উঠেছে ছাত্রলীগের এই জুনিয়র নেতা।

জানা যায়, গত ১০ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে মীর মোশারফ হোসেন হলের ১১০নং কক্ষে ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মহিতোষ রায় টিটো ও ছাত্রলীগ কর্মী মামুন (ইতিহাস ৪০তম আবর্তন) বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ৩য় বর্ষের এক ছাত্রীকে নিয়ে আসেন। রাত ১১টায় ওই মেয়েকে নিয়ে হলে প্রবেশ করেন। তবে দোষ স্বীকার করে টিটো দাবি করেন রাত্রি যাপন হয়নি, ওই মেয়ে একাই গেস্টরুমে অবস্থান করছিল।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাত আড়াইটার দিকে সংশ্লিষ্ট হলের প্রাধাক্ষ, আবাসিক শিক্ষকরা উদ্ধার করেন। শিক্ষকরা তাৎক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক মজিবুর রহমানেক হলে ডাকলেও প্রক্টর আসেন প্রায় দু'ঘণ্টা পর।
অভিযুক্ত টিটো এবং আসফিকুর রেজা সাগর ইতোপূর্বে দুই সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় এক বছরের জন্য বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। কিন্তু বহিষ্কারের ছয় মাস পর সিন্ডিকেটের অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়।

এদিকে, টিটো, বসির ও সাগর রফিক জব্বার হলের আবাসিক ছাত্র হয়েও অবৈধভাবে দীর্ঘদিন ধরে মীর মোশারফ হোসেন হলে অবস্থান করছেন। অভিযোগ রয়েছে হলে মাদকের প্রধান সরবরাহকারী এই তিন জন। এ বিষয়ে একাধিকবার অবহিত করা হলেও তা আমলে নেয়নি হল প্রশাসন।

অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও নীরব ভূমিকা পালন করছে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ টিটোর অপরাধের কথা বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে তার বহিষ্কারের সুপারিশ করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে নীরব থাকায় এ নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর এসব অপরাধ কর্মকাণ্ডের মদদ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি এখন পর্যন্ত অভিযুক্তদের ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেননি। এমনকি এসব বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলেও সাংবাদিকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং দায়সারা উত্তর দেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, হলের প্রভোস্ট অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

হলের প্রভোস্ট মো. ওবায়দুর রহমানের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি অভিযুক্তদেরকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে বলেই ব্যস্ততা দেখিয়ে মুঠোফোন বন্ধ করে দেন।

এমন একজন অপরাধীকে প্রশ্রয় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অন্যান্য শিক্ষার্থীদের অপরাধ করার অনুপ্রেরণা দিচ্ছে বলে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা অভিযোগ তুলেছে। এ ব্যাপারে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমদ বলেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে থাকলে এ ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডের প্রশ্রয় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের আরও অপরাধ করার সুযোগ সৃষ্টি করছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর