চট্টগ্রাম বন্দরের প্রাণখ্যাত কর্ণফুলী নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে বর্জ্য শোধনাগার তৈরির পরিকল্পনা করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। এ নিয়ে নাগরিক সমাজ নানা আন্দোলন-কর্মসূচি পালন করে। অবশেষে কর্ণফুলী নদীর বুকের চরের ওপর বর্জ্যাগার নির্মাণ প্রকল্পটি বাতিল করা হয়েছে। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের রাজস্ব বিভাগ বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর প্রকল্প বাতিলের বিষয়ে চিঠিও দেন। এর আগে গত ২৪ মার্চ বাংলাদেশ প্রতিদিনে ‘কর্ণফুলীর চরে বর্জ্য শোধনাগার!’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চসিক কর্ণফুলী নদীর চরে বর্জ্যাগার নির্মাণের উদ্যোগ নিলে এর বিরোধিতা করেন পরিবেশকর্মীরা। পরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন প্রস্তাবটি ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের খাস জমি শাখা এ নিয়ে নদী কমিশনের মতামত চায়। নদী কমিশন ‘কর্ণফুলীর নদীর চরে বর্জ্য শোধনাগার হলে নদীর পানি দূষিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং জীববৈচিত্র্যসহ পরিবেশ-প্রতিবেশগত ভারসাম্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমতাবস্থায় বোয়ালখালী উপজেলার চর বাকলিয়া মৌজার বিএস ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত ৫৪৪ দাগের ৩৫ একর জমিতে বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের প্রস্তাবটি নির্দেশক্রমে নামঞ্জুর করা হয়’ শীর্ষক মতামত দেয়। এরপর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন গত বৃহস্পতিবার প্রস্তাবটি নামঞ্জুর করার বিষয়ে ‘চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলায় বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের জন্য সিটি করপোরেশনের অনুকূলে বন্দোবস্ত প্রদানসংক্রান্ত’ একটি চিঠি বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠায়। চিঠিতে কর্ণফুলী নদীর চরে বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন করা হলে নদীর পানি দূষিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এবং জীববৈচিত্র্যসহ পরিবেশ-প্রতিবেশগত ভারসাম্য মারাত্মকভাবে বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের প্রস্তাবটি নামঞ্জুর করার কথা উল্লেখ করা হয়।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) মো. রাজিব হোসেন বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে নদী কমিশনের মতামত চেয়েছে। নদী কমিশন কর্ণফুলী নদীর চরে বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন করা হলে নদীর পানি দূষিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং জীববৈচিত্র্যসহ পরিবেশ-প্রতিবেশগত ভারসাম্য মারাত্মকভাবে বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের প্রস্তাবটি নামঞ্জুর করে। নদী কমিশনের মতামতের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় চসিকের প্রস্তাবটি নামঞ্জুর করে।
চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান বলেন, কর্ণফুলীর চরে বর্জ্য শোধনাগার করার বিরোধিতা করে আমরা নানা কর্মসূচি পালন করেছি। সরকার পরিবেশের কথা বিবেচনা করে প্রস্তাবটি বাতিল করেছে। এজন্য আমরা চট্টগ্রামের সদ্য সাবেক জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
জানা যায়, ১৯৩০ সালে কালুরঘাট সেতু নির্মিত হয়। ১৯৯০ সালে তৈরি হয় কর্ণফুলী দ্বিতীয় সেতু। ফলে নগরীর কল্পলোক আবাসিক এলাকার পূর্ব পাশে এবং বোয়ালখালী ও শিকলবাহার পশ্চিম পাশে কর্ণফুলীর মাঝখানে জেগে ওঠে ৩৫ একর ভাসমান চর। যা বোয়ালখালী উপজেলাধীন চর বাকলিয়ার বিএস ৫৪৪ দাগে ১ নম্বর খাস খতিয়ানে নদী হিসেবে রেকর্ড হয়। চরটি পূর্ণিমা বা অমাবস্যার জোয়ারে ডুবে যায়। গত বছরের নভেম্বরে এই চরে বর্জ্য শোধনাগার করার পরিকল্পনা করে চসিক। পরে বর্জ্য শোধনাগার বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কাছে অনাপত্তিপত্র চায় চসিক।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এটি হবে নদীকে গলা টিপে হত্যা করার নামান্তর। নষ্ট হবে নদীর পরিবেশ। হুমকিতে পড়বে মৎস্য সম্পদ। নগরের নানা বর্জ্যে স্বকীয়তা হারাবে প্রাকৃতিক নদী কর্ণফুলী। ধ্বংস হবে প্রাকৃতিক চর।