এইচএসসির ফলাফল ভালো করেও ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো না শহীদ সাদ আল আফনান পাটওয়ারীর। বাবার মৃত্যুর কিছুদিন পরই পরিবারের একমাত্র ছেলে আফনানও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। শুধু তার স্বপ্ন নয় সেই সাথে পরিবারের স্বপ্নও শেষ হয়ে গেছে।
লক্ষ্মীপুর ভিক্টোরি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সদ্য প্রকাশিত ফলাফলে জিপিএ-৪.১৭ পেয়ে পাস করেছেন আফনান। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে গণমাধ্যমকর্মীরা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গেলে আফনানের মা নাছিমা আক্তার ও বোন জান্নাতুল মাওয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাদের স্বপ্ন ভঙ্গের করুন বর্ণনা দেন।
ফলাফল হাতে নিয়ে লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের বাঞ্চানগর গ্রামের বাস টার্মিনাল এলাকার পারিবারিক কবরস্থানে গিয়ে অপলক চোখে তাকিয়ে অসহায় মা আর বোনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তাদের নিরব আর্তনাদ যেন আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে। শহীদ আফনান স্থানীয় মৃত সালেহ আহমেদের ছেলে।
আফনানের মা বলেন, আফনানের পাসের খবর আমার জন্য খুশির। কিন্তু খুশি উদযাপন যার সঙ্গে করব, সে তো আমার কাছে নেই। গুলি করে আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে সন্ত্রাসীরা। আমার কোল শূন্য করে দিয়েছে। এক ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে তাদের পড়ালেখা করিয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে মর্যাদাশীল করে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছায় অনেক কষ্ট করেছি। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে। তারও স্বপ্ন ছিল এইচএসসি পাশ করে বিদেশে গিয়ে পড়ালেখা করার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। এর আগেই সন্ত্রাসী টিপু ও তার সহযোগী খুনিরা আমার সন্তানকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করেছে।
তিনি আরো বলেন, সেসব খুনিরা এখনো কেউ গ্রেফতার হয়নি। তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে ফাঁসির দাবি করছি। তারা এখনো নানাভাবে আমাদের হুমকি দিচ্ছে। অফার দিচ্ছে। আমি কি আমার ছেলের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করতে পারি? আমি সরকারের কাছে আমার মেয়ে ও পালক মেয়ের চাকরি নিশ্চিত করার দাবি জানাই।
আফনানের বোন বলেন, ভাই ছিল আমার বন্ধুর মতো। সব কথা তার সঙ্গে বলতাম, এখন কার সঙ্গে বলবো। আমার আর কেউ রইলো না। খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
এদিকে আন্দোলনকারীরাও বলছেন, আফনান লক্ষ্মীপুরের প্রথম শহীদ। কোটা বৈষম্য দূর করতে যারা আন্দোলন করেছেন তারা সবাই মেধাবী ছিলেন। মেধার স্বীকৃতি দেওয়া ও নেওয়ার জন্য মেধাবী শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছেন। তাদের রক্ত ঢেলে দিয়েছেন। আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে যারা শহীদ হয়েছেন এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত করতে হবে।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৪ আগস্ট লক্ষ্মীপুরের মাদাম ব্রিজ এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সাদ আল আফনান পাটওয়ারী। পরে ১৪ আগস্ট আফনানের মা নাছিমা আক্তার বাদী হয়ে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুকে প্রধান করে ৭৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৫০০-৬০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল