কয়েক যুগ আগের কথা। তখন ছিলো জ্যৈষ্ঠ মাস। গাছে গাছে পাকা আম, জাম, লিচু। পাখপাখালির কলকাকলিতে মুখরিত লাল-সবুজের দেশ। বাতাসে মিষ্টি ফলের মনমাতানো সৌরভ। পুরো দেশটিই যেন ফলফলাদির স্বর্গপুরী। //পাখিদের খাবারের অভাব নেই। যেখানে যায় সেখানেই রসে ভরা পাকা ফল। সারাদিন নানা রকম টসটসে মিষ্টি ফল খেয়ে পেট ভরিয়ে রাখে। পাখিদের সুখের সীমা নেই। তারা মনের আনন্দে এক গাছের ডাল থেকে আরেক গাছের ডালে গিয়ে লেজ উঁচিয়ে খোশগল্প করে। সবাই সবার খোঁজখবর নেয়। পাখিরাজ্যজুড়ে চলছে গাছপাকা ফল খাওয়ার মহা উৎসব। ফল খাওয়া ও ঘুমানো ছাড়া তাদের কোনো কাজকর্ম নেই। একদিন মনের সুখে টিয়ে ও বুলবুলির মধ্যে কথা হচ্ছিলো। কথার ফাঁকে টিয়ে বললো- ও ভাই বুলবুলি! তুমি কি জানো? কোকিল-কাকের বাসায় ডিম পাড়ে আর সেই ডিম বোকা কাক না বুঝে তা দিয়ে ছানা ফোটায়। আচ্ছা, বলো দেখি বুলবুলি ভাই- কোকিল কি কাজটা ঠিক করছে? বুলবুলি বললো- না টিয়ে ভাই। কোকিল কাজটা মোটেও ঠিক করছে না। নিজে ডিম পেড়ে অন্যকে দিয়ে ছা ফোটাবে এটা আবার কেমন কথা। তার একটা বিহিত হওয়া দরকার। একদম ঠিক বলেছ- ভাই বুলবুলি। তাহলে চলো- এ বিষয়টি নিয়ে চড়ুই, বাবুই ও টুনটুনির সঙ্গে কথা বলি। দেখি তারা কী বলে। কোকিল কাকের বাসায় ডিম পাড়ার খবর এক কান-দুই কান-তিন কান হয়ে পুরো পাখিরাজ্যে এ খবর ছড়িয়ে পড়লো। কয়েকদিনের মধ্যে ডিম পাড়ার খবর পাখির রাজা ঈগলের কাছে পৌঁছে গেলো। পাখিরাজ এই খবর শুনে খুব রাগ করলো। কী! কোকিলের এতো বড় সাহস। আমাকে না জানিয়ে কাকের বাসায় ডিম পাড়ে। দাঁড়া- তাদের দেখাচ্ছি মাজা। কাক ও কোকিলের বিচার একসঙ্গেই করব। তাদের দুজনকেই কঠিন শাস্তি দিব। টিয়ে পাখি ঈগল রাজার আদালতে নালিশ করলো। ঈগল রাজ নালিশ আমলে নিয়ে বিচার বসায়। সেই বিচারে দেশের সব পাখপাখালি হাজির হলেও দোয়েল পাখি এখনো হাজির হয়নি। ঈগল রাজ ময়না ও শালিককে জিজ্ঞাসা করলো- কী ব্যাপার! বিচারে সবাই হাজির হলেও দোয়েল কেন এখনো হাজির হয়নি? ময়না বললো- জুাহাপনা! দোয়েল খুব শৌখিন নিশ্চয়ই সাজগোজ করতে গিয়ে একটু দেরি হচ্ছে। কথা মুখে থাকা অবস্থায় দোয়েল শিষ বাজাতে বাজাতে রাজদরবারে প্রবেশ করলো। ঈগল রাজা দোয়েলকে জিজ্ঞাসা করলেন- কী দোয়েল! তোমার আসতে দেরি হলো যে। দোয়েল বললো- মহারাজ একটু নাপিতবাড়ি গিয়েুছিলাম। অনেক দিন পর আপনার সঙ্গে দেখা হবে একটু সাজগোজ না করলে চলে। ও তাই বলো। বেশ করেছ হা-হা-হা! । বিচার শুরু হয়ে গেলো। কাক ও কোকিল খুব ভয়ে আছে। বিচারে কী যেন কী শাস্তি হয়। ঈগল রাজা একে একে সবার মতামত নিলেন শুধু দোয়েল ছাড়া। সবার মুখে একই কথা কাক ও কোকিলের কঠিন শাস্তি চাই। শেষে দোয়েলের মতামত চাওয়া হলো। দোয়েল বললো- মহারাজ! আপনি সবার অভিভাবক। আপনি নিশ্চয়ই অবগত কোকিল সুরের বাউল সে সবাইকে গান শুনায়। একেক দিন একেক বাড়ি থাকে। আজ এখানে তো কাল ওখানে।
সে যদি এভাবে ঘুরে ঘুরে গান না শুনায়। তাহলে আমরা কার কাছে গান শুনবো। কোকিল আমাদেরকে গান শুনানোর জন্য সব মায়া ত্যাগ করে কাকের বাসায় ডিম পাড়ে। কাক তা দিয়ে ছানা ফোটায়। এতো আমাদেরই লাভ। আমরা কোকিলের গান শুনতে পারি। তাতে অন্যায়ের কিছু দেখছি না। ঈগল রাজা বললেন- তাই তো! আমি তো কখনো এভাবে ভাবিনি দোয়েল। যাও আজ থেকে সারাজীবন কোকিল কাকের বাসায় ডিম পাড়বে আর কাক তা দিয়ে ছা ফোটাবে। সেদিন ঈগল রাজার দরবারে কোকিল-কাকের বাসায় ডিম পাড়ার আইনটি পাখিদের সম্মতিক্রমে পাস হয়।