শুক্রবার, ১০ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

পরহেজগারি অর্জনের তাগিদ দেয় রোজা

মাওলানা আবদুর রশিদ

মাহে রমজান প্রতিবছরই আমাদের মাঝে হাজির হয়। ইসলামের ফরজ বা অবশ্য পালনীয় বিধানের মধ্যে রমজান মাসে রোজা পালন অন্যতম। এই পবিত্র মাসেই মানুষের জন্য হেদায়েতের পথ প্রদর্শনে আল কোরআন নাজিল হয়। বছরের এগারো মাস মানুষ পার্থিব কাজে ডুবে থাকে। মানবাত্মায় গাফিলতির পর্দা পড়ে যায়। শারীরিক বিষয়ের তুলনায় আত্মিক বিষয়ে মানুষ পিছিয়ে পড়ে। রমজান মাসে শরীরের খাবার কমিয়ে রূহানী খাবারের পরিমাণ বাড়ানো হয়। শরীরের শক্তির তেজস্বতা কমিয়ে রূহানী শক্তিকে দ্রুতগামী করার সাধনায় লিপ্ত হয় মুমিনরা। এভাবে  একপর্যায়ে এসে উভয় শক্তির মাঝে সমান্তরাল সৃষ্টি হয়, যা মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় নিয়ামত।

আল-কোরআনে রাব্বুল আলামিন আল্লাহর সিয়াম সাধনাকে ‘পরহেজগারি অর্জনের জন্য’ ফরজ বিধান বলে ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ করা হয়েছে, ‘পূর্ববর্তী সম্প্রদায়ের জন্যও একই বিধান ছিল’। অর্থাৎ রোজা পালন শুধু কোরআনের মাধ্যমে প্রবর্তিত হয়নি। তার আগের আসমানি কিতাবেও সিয়াম সাধনা বা রোজার বিধান ছিল।  আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য কৃচ্ছ্র সাধন ইবাদত হিসেবে শুধু ইসলামে পরিপালনীয় নয়, আগের সব সম্প্রদায়ের মধ্যে এ সাধনা বিদ্যমান ছিল। পবিত্র ইসলামের পাঁচটি ফরজের মধ্যে সিয়াম সাধনা বা রোজা পালন অন্যতম। মাহে রমজানেই মানুষের জন্য ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য নির্দেশকারী হিসেবে আল-কোরআন অবতীর্ণ হয়। পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার-১৮৫ আয়াতে মাহে রমজানে রোজা পালনের বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে সে এ মাসের রোজা পালন করবে।’ রোজা পালনের আবশ্যিক এ বিধান ‘অসুস্থ’ আর ‘মুসাফির’দের  জন্য শিথিল করে বলা হয়েছে— যারা অসুস্থতা এবং অন্য কারণে রোজা রাখতে পারবে না তাদের অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে। আর যাদের জন্য তা অত্যন্ত কষ্টদায়ক হবে, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্যদান করবে।’ সিয়াম সাধনার মাহে রমজানে শুধু রোজা রাখলেই চলবে না, সব ধরনের অন্যায় এবং হারাম কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। পানাহার বর্জন করেও কেউ মিথ্যা বললে, অন্যের মনে কষ্ট দিলে, সুদ ঘুষের মতো পাপ কাজে লিপ্ত থাকলে তার সিয়াম সাধনা হবে না। রসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্যায় কথা ও অন্যায় কাজ ছাড়ল না তার খানাপিনা ত্যাগে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (বোখারি)

রমজান মাসের একটা গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে মানুষের প্রতি দয়া করা। দান করা। এ বিষয়ে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, যখন রমজান মাস উপস্থিত হতো রসুল (সা.) সব কয়েদিকে মুক্তি দিতেন এবং প্রত্যেক যাচ্ঞাকারীকে দান করতেন। বায়হাকি।  আরেকটি হাদিসে এসেছে এ মাসে রসুল (সা.)-এর দান এতই বৃদ্ধি পেত যে, তা যেন প্রবল ঝড়োবায়ুর মতো মনে হয়।

     লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর