আবারও আলোচনায় ভোটার তালিকা। নির্বাচন কমিশন গঠনের পর ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরুর প্রস্তুতি রাখছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। এ ছাড়া বর্তমানে বছরজুড়েই ভোটার হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কেউ চাইলে অনলাইনেও ভোটার হওয়ার আবেদন করতে পারে।
২০০৭-০৮ সালে নবম সংসদের আগে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হয়। এ ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর নতুন করে ভোটারযোগ্যরা তালিকাভুক্ত হন এবং মৃতদের বাদ দেওয়া হয় হালনাগাদে।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, প্রতি বছর ভোটার তালিকা হালনাগাদ শেষে ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করে। বছরজুড়েই এখন ভোটার হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমরা প্রস্তুতি রাখছি নির্দেশনা পেলেই কাজ শুরু হবে।
কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি) একযোগে পদত্যাগ করায় সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানে শূন্যতা তৈরি হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন শেষে দেশে ফিরে আসার পরপরই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করার চিন্তা রয়েছে বলে জানিয়েছেন একজন উপদেষ্টা। তাই নির্বাচন কমিশন গঠনের পরে ভোটার তালিকা আপডেট করার কাজ শুরু হবে। সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যে উপনীত ও ভোটার তালিকা তৈরি হলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নিউইয়র্কে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (বাংলাদেশ সময় বুধবার) জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনের এক ফাঁকে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
ভোটার তালিকায় কিছু অসংগতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। ভোটার তালিকা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন- ভোটার তালিকা তৈরি হওয়ার পরে নির্বাচনি দিনক্ষণ ঘোষণা হবে। তিনি আরও বলেছেন- রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতেই এটা হবে।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ভোটার তালিকায় যে অসংগতি রয়েছে, তা দূর করতে হবে। ভোটার তালিকার একটা অসংগতি হচ্ছে-জেন্ডার গ্যাপ তথা নারীদের সংখ্যা কম। এই ত্রুটি দূর করতে হবে। ২০০৮ সালের তালিকায় পুরুষ ভোটারের চেয়ে নারী ভোটার ১৪ লাখ বেশি ছিল। কিন্তু এখন নারী ভোটারের সংখ্যা কমে গেছে। ভোটার তালিকায় নারীদের অন্তর্ভুক্তিতে কিছু সমস্যা রয়েছে। এই ত্রুটি দূর করতে হবে। এ ছাড়া প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়েও নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
কমেছে নারী ভোটার : ২০০৮-এর তালিকা অনুযায়ী আমাদের ভোটার সংখ্যা ছিল মোট ৮ কোটি ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৬৯৮। এর মধ্যে নারী ভোটার ছিল ৪ কোটি ১২ লাখ ৩৬ হাজার ১৪৯ এবং পুরুষ ভোটার ৩ কোটি ৯৮ লাখ ২২ হাজার ৫৪৯। অর্থাৎ ওই তালিকা অনুযায়ী নারী ভোটার ছিল পুরুষ ভোটার থেকে ১৪ লাখ ১৩ হাজার ৬০০ বেশি।
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কাজী রকীবউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে হালনাগাদ করার পর ভোটারের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯ কোটি ১৯ লাখ ৮০ হাজার ৫৩১। এর মধ্যে নারী ভোটার ছিল ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৪৪ হাজার ৫৬৬ এবং পুরুষ ভোটার ৪ কোটি ৬১ লাখ ৩৫ হাজার ৯৬৫। অর্থাৎ ২০১৩ সালের তালিকা অনুযায়ী, নারী ভোটার ছিল পুরুষ ভোটার থেকে ২ লাখ ৯১ হাজার ৩৯৯ জন কম। এ ছাড়া জনশুমারিতে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি থাকলেও ভোটার তালিকায় দেখা গেছে বিপরীত চিত্র। প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে এখন ১২ কোটির বেশি ভোটার। চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যা এখন বেশি। অথচ জনশুমারিতে নারী বেশি রয়েছে ১৬ লাখ ৩৪ হাজার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জনসংখ্যায় যেহেতু নারীর সংখ্যা বেশি, স্বাভাবিকভাবে নারী ভোটারও বেশি থাকার কথা। কিন্তু বাড়ি বাড়ি গিয়ে ব্যাপক প্রচারের অভাব, নানা প্রতিবন্ধকতা, প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের মধ্যে আগ্রহ বা সুযোগের অভাব ভোটার সংখ্যায় ওই উল্টো চিত্রের কারণ ঘটাতে পারে।
ছবিসহ ভোটার তালিকা শুরুর পর থেকে নারী-পুরুষের সংখ্যা প্রায় সমান সমান থাকলেও গত ১৫ বছরে হালনাগাদে নারী ভোটারদের সাড়া মিলেছে কম। অথচ নারীদের ভোটার করা নিশ্চিতে স্থানীয় মহিলা জনপ্রতিনিধি, বিশেষ করে জেলা, উপজেলা, সিটি, পৌর ও ইউপির সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের সহযোগিতা নেওয়া হয়। সবশেষ ২ মার্চ ইসির প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী- দেশে মোট ভোটার এখন ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ২১ লাখ ৪৪ হাজার ৫৮৭ জন; আর নারী ভোটার ৫ কোটি ৯৭ লাখ ৪ হাজার ৬৪১ জন। এ ছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ৯৩২ জন। বর্তমানে নারী ভোটারের চেয়ে প্রায় ২৪ লাখ পুরুষ ভোটার বেশি।
প্রতি বছর ভোটার তালিকা হালনাগাদ শেষে ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করে। ২০২৩ সালের ২ মার্চ ভোটার ছিল ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরও ৫ লাখ নতুনদের যুক্ত করে ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৯ জন। হালনাগাদে যুক্ত হয়েছে ২১ লাখ ৬০ হাজার ৮৭১ জন। ভোটার সংখ্যার এ বৃদ্ধির হার ২ দশমিক ২৬ ভাগ। সব মিলিয়ে এখন ভোটার দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন, যা প্রায় ১৭ কোটি মোট জনসংখ্যার ৭১ দশমিক ৭৪ ভাগ।