আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে, এ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকলেও নির্বাচনি মাঠ গোছাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বিগত ১৫ বছর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের চরম নির্যাতনের শিকার জামায়াত ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে তারা আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে। পাশাপাশি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে একটি জোট গড়ারও পরিকল্পনা রয়েছে জামায়াতে ইসলামীর। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে দলের রুকন সম্মেলনে বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী আগামী সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে।
জানা গেছে, রাজনীতির মাঠ গোছাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। এ লক্ষ্যে সারা দেশে মাঠে সরব হয়েছে তারা। তাদের মূল লক্ষ্য আগামী নির্বাচনে ইতিহাস সৃষ্টি করা। সে জন্য এখন থেকে মানবিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনমত তৈরির সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে দলটি। জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনি লড়াইয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চায়। শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে দলটি প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ পায়নি। তার পরও আগামী নির্বাচনে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে থাকবে জামায়াতে ইসলামী, এমনটিই মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। দলের একটি সূত্র জানায়, বিগত ১৫ বছর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গুম, খুন, ভিন্ন মতাবলম্বীদের রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন এবং সর্বশেষ জুলাইয়ের গণহত্যার কারণে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই বলে মনে করেন দলের নেতারা। সে জন্য তারা কয়েকটি ছক করেছে। আওয়ামী লীগের অত্যাচার-নির্যাতন, দুর্নীতির কথা ব্যাপকভাবে প্রচার করা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সমর্থকদের আশ্বস্ত করা যে, জামায়াত প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না। নিরাপত্তা দিতে পারে সবার, বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের। জামায়াতে ইসলামী বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যের লক্ষ্যেও কাজ করে যাচ্ছে। আলিয়া-কওমিপন্থি আলেমদের মধ্যে বিভাজন দূর করে আলেমদের একতার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে দলটি। আর এই উদ্যোগের কারিগর খোদ জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান। ইতোমধ্যে তিনি কওমি-আলিয়ার আলেমদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে ঐক্যের বার্তা দিয়েছেন। জামায়াতের অতীত ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন। এর পাশাপাশি ছোট-বড় ইসলামী দলগুলোকে এক সুতায় গাঁথার চেষ্টা করছে জামায়াত। ধর্মভিত্তিক ছাড়াও বিএনপির সঙ্গে একসময় যুগপৎ আন্দোলন করা এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে পাশে রাখতে চাচ্ছে তারা। এসব দলকে এক প্ল্যাটফর্মে এনে নির্বাচনি জোটে রূপান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে জামায়াতের। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, গণ অধিকার পরিষদ, জাতীয়তাবাদী সমমনা এবং ১২ দলীয় জোটকেও নিজেদের পক্ষে টানতে চেষ্টা চালাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। এ ছাড়া চরমোনাইর পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনকেও জোটে টানার চেষ্টা চলছে। তবে দলটির নায়েবে আমির এবং চরমোনাই পীরের ছোট ভাই সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম জামায়াতের সঙ্গে জোটে রাজি নন বলে জানা গেছে। এই দলগুলো জামায়াতের বিষয়ে আগের মতো কট্টর অবস্থানে নেই। তাদের মধ্যে কিছুটা নমনীয়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জামায়াত চাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার দেরিতে নির্বাচনের ঘোষণা দিক। এর আগে ঘোষিত সংস্কার কাজগুলো সম্পন্ন হোক। কারণ জামায়াত মনে করে সময় যত যাবে ততই তারা মাঠ গোছাতে পারবে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সর্বশেষ সংলাপে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার চেয়ে সংস্কারে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে দলটি। জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামীর ভিতরে এমন প্রচারণা আছে যে, এককভাবে বিএনপির ভোট কমবেশি ৪৫ শতাংশ। জামায়াতের ভোট ১০ থেকে ১২ শতাংশ। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য দলের বাইরে বিপুল সংখ্যক ভোটার ভাসমান। এ অবস্থায় জামায়াতে ইসলামী যদি সমমনা ইসলামী দলগুলো নিয়ে নির্বাচনি মোর্চা গড়তে পারে সে ক্ষেত্রে বৃহত্তর নির্বাচনি শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে। উল্লেখ্য যে, এককভাবে নির্বাচন করে জামায়াতে ইসলামী ১৯৯১ সালে ১২ দশমিক ১ শতাংশ এবং ১৯৯৬ সালে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল।