তিন দিন আগে মিরপুর টেস্টের স্কোয়াড ঘোষণা করে বিসিবি। তখন মনে হয়েছিল মিরপুর স্টেডিয়ামে টেস্ট ক্যারিয়ারের আনুষ্ঠানিক পর্দা টানবেন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। অন্তর্বর্তী সরকার ও বিসিবির সবুজসংকেত পেয়ে ৩৭ বছর বয়সি সাকিব মিরপুর টেস্ট খেলতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র থেকে রওনা দেন। দুবাই হয়ে ঢাকায় আসার কথা ছিল তার। দুবাইয়ে ঢাকার বিমানে ওঠার আগেই সাবেক অধিনায়ক থেমে যান। আসা হয়নি বাংলাদেশে। খেলা হচ্ছে না মিরপুর টেস্ট। তাহলে কানপুরেই কি ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলে ফেলেছেন সাকিব? সাকিবের দেশে ফেরা নিয়ে গতকাল দিনভর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মিরপুর স্টেডিয়াম এলাকা ছিল উত্তাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা কুশপুতুল দাহ করেন সাকিবের। মিরপুরে স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল করে ছাত্র-জনতা। প্রতিবাদকারীরা সাকিবকে টেস্ট স্কোয়াড থেকে বাদ দিতে বিসিবির কাছে স্মারকলিপি দেয়। পরিস্থিতি এমন জটিল হওয়ায় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া পরামর্শ দিয়েছেন সাকিবকে দেশে না ফিরতে। মিডিয়াকে ক্রীড়া উপদেষ্টা জানিয়েছেন, ‘আমি নিজেও চেয়েছি, সাকিব আল হাসানের মতো একজন ক্রিকেটার দেশের মাটিতে অবসর নিক। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। তবে, প্রথম দিকেই বলেছি সাকিব আল হাসানের আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে জনমনে ক্ষোভ রয়েছে যা স্বাভাবিক। রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করাসহ জনমনের ক্ষোভ নিরসনে তিনি ফেসবুক পোস্ট দিলেও সাম্প্রতিক প্রতিবাদে প্রতীয়মান হয়েছে যে তা যথেষ্ট ছিল না। যারা প্রতিবাদ করছে তাদেরও তা করার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশের মধ্যকার সিরিজে কোনো প্রকার অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতেই আপাতত দেশে খেলতে আসার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে বিসিবিকে পরামর্শ দিতে হয়েছে।’ দুবাইয়ে অবস্থানকালীন সাকিব ইএসপিএন স্টার স্পোর্টসকে বলেন, ‘কোথায় যাব আমি জানি না। তবে দেশে ফিরছি না, এটা জানি।’ সাবেক অধিনায়কও ঢাকায় ফেরার ফ্লাইট বাতিল করেছেন। জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সাকিব দেশে ছিলেন না। তখন তিনি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লিগের সংসদ সদস্য। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তার সমর্থন না থাকায় তাকে ফ্যাসিস্টদের দোসর হিসেবে বিবেচিত করে ছাত্র-জনতা। আন্দোলনের সময় গার্মেন্ট কর্মী হত্যার অভিযোগে আসামি বানানো হয়। এ ছাড়া শেয়ার মার্কেটে কারসাজির জন্য সাকিবকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়। সাকিবের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ব্যাপক বিক্ষোভের কারণে বিসিবি শুরুতে তাকে নিরাপত্তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। কিন্তু সাকিব চেয়েছিলেন দেশে ফিরে মিরপুরে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে। খেলা শেষে আবার নির্বিঘ্নে দেশ ছাড়তে চেয়েছিলেন। কিছুদিন আগে ক্রীড়া উপদেষ্টা জানিয়েছিলেন সাকিবের দেশে ফেরা এবং ফিরে যাওয়ায় আইনি কোনো ঝামেলা থাকবে না। এসব সবুজসংকেত পেয়েই দেশে ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠেন ৭১ টেস্ট খেলা সাকিব। কিন্তু পরিস্থিতি দিন দিন তার বিপক্ষে অবস্থান নেয়। গতকাল ছিল উত্তাল। কুশপুতুল দাহ করা ছাড়াও মিরপুর স্টেডিয়ামের মূল গেটের চারদিকে প্রতিবাদকারীরা ঘিরে রাখে এবং স্লোগান দেয়।
সকালে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অনুশীলন ছিল মিরপুরে। কিন্তু নিরাপত্তার কথা ভেবে হয়নি। দুপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার অনুশীলনের কথা ছিল। ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা দিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলে পুরো স্টেডিয়াম।