লেবাননে বুধবার আবারও ধারাবাহিক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। যেখানে ১০ জনেরও বেশি মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আগের দিন মঙ্গলবার একসঙ্গে ৫ হাজার পেজার বিস্ফোরিত হয়েছে। তাতে অন্তত ২০ জন নিহত ও ৩ হাজার আহত হয়েছিলেন। বুধবার ওয়াকিটকি বিস্ফোরিত হয়েছে, যা একটি বেতার যোগাযোগ যন্ত্র। তাতে অন্তত ১৪ জন নিহত ও ৪৫০ জন আহত হয়েছেন।
যখন ওয়াকিটকি বিস্ফোরিত হয়, তখন হিজবুল্লাহ কমান্ডারদের হাতে ডিভাইসটি ছিল। পেজারের মতোই এটিও ৫ মাস আগে কেনা হয়েছিল। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে ওয়াকিটকি এবং অন্যান্য নতুন ডিভাইসের ওই বিস্ফোরণ ঘটেছে।
পেজার হামলার জন্য ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করেছে লেবানন। এর পর বুধবার হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা ইসরায়েলের কিরিয়াত শমোনায় প্রায় ২০টি রকেট নিক্ষেপ করেছে। আইডিএফ হামলার বিষয়ে একটি বিবৃতি জারি করে বলেছে যে, তারা বেশ কয়েকটি শত্রুর আক্রমণ নস্যাৎ করেছে। কেউ আহত হয়নি।
এদিকে রয়টার্স একটি খবর প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে, হিজবুল্লাহর কেনা ৫ হাজার পেজারের ভিতরে বিস্ফোরক রেখে দিয়েছিল ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। তবে ইসরায়েলি ও মার্কিন সূত্র সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিয়স ও আল-মনিটরকে বলেছে, হিজবুল্লাহ এই পরিকল্পনা সম্পর্কে জেনে গেছে, এমন আশঙ্কার পর পরই বিস্ফোরকগুলো বিস্ফোরিত হয়।
পেজারগুলোর নির্মাতা হিসেবে গোল্ড অ্যাপোলো কোম্পানি লিমিটেড নামে তাইওয়ানভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের নাম সামনে আসে। কিন্তু গোল্ড অ্যাপোলোর প্রতিষ্ঠাতা সু চিং-কুয়াং বিস্ফোরণের সঙ্গে কোনোরকমের সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগ নাকচ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ছবিতে দেখা যায়, বিভিন্ন গাড়িতে আগুন জ্বলছে, ধোঁয়া উঠছে একটি আবাসিক এলাকা থেকে। খবরে বলা হয়, ওয়াকিটকি, রেডিও, গাড়ি, এমনকি সৌরবিদ্যুতের প্যানেল বিস্ফোরিত হচ্ছে। আল-জাজিরার সংবাদদাতা আলী হাশেম একটি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। দক্ষিণ লেবাননে এক দাফন অনুষ্ঠান চলার সময় একটি গাড়ি বিস্ফোরিত হতে দেখেন তিনি। দৃশ্যত, কোনো ড্রোন হামলায় নয়; বরং ভিতর থেকেই গাড়িটিতে আগুন ধরে যায়। আলী হাশেম বলেন, এদিন দক্ষিণ লেবানন ও বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে একের পর এক ওয়াকিটকি ও অন্যান্য যন্ত্রের বিস্ফোরণ ঘটে; যেগুলো পেজার ছিল না।
এদিকে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় এসব যন্ত্র সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের একটা যোগসাজশ আছে। যন্ত্রগুলোতে ১ থেকে ৩ গ্রাম শক্তিশালী বিস্ফোরক ভরা হয়ে থাকতে পারে; যেমনটা ঘটেছে পেজারের ক্ষেত্রে। তবে কিছু হিজবুল্লাহ সদস্যের ধারণা, এসব বিস্ফোরণ যন্ত্রগুলোর ব্যাটারির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। আল-জাজিরার বৈরুত সংবাদদাতা ইমরান খান বলেন, ‘ইসরায়েলের এ আক্রমণকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে দেখছে লেবানন। কেননা এটি সন্ত্রাসকেই আরও উসকে দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ হামলায় মানুষ আতঙ্কিত।’ নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক এলিজাহ ম্যাগনিয়ার বলেন, হিজবুল্লাহ ও লেবাননের সমাজের ভিতর সফলভাবে সন্দেহ ঢুকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে ইসরায়েল। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল ঠিক এটিই চায়। তারা চায়, লেবাননের মানুষের মধ্যে সংশয় তৈরি হোক এবং এ ফাঁকে সম্ভবত তৃতীয় দফা হামলার জন্য তারা (ইসরায়েল) প্রস্তুতি নিক।’ ‘আমাদের অপেক্ষা করতে হবে ও দেখতে হবে, সামনে ইসরায়েল কী ঘটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। কেননা, এই হামলাই শেষ নয়’, বলেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক এলিজাহ।