সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী (পিয়ন) ৪০০ কোটি টাকার মালিক সেই জাহাঙ্গীর আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে তাকে ২৪ অক্টোবর হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে।
দুদক উপপরিচালক রাশেদুল ইসলামের সই করা নোটিস তার নিজ বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিলে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। গতকাল দুদক সূত্র জানায়, আলোচিত ওই পিয়ন জাহাঙ্গীর বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেছেন। গত ২০ আগস্ট তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এরপরে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি এরই মধ্যে তার সম্পদ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নথিপত্র সংগ্রহে সরকারি-বেসরকারি ১০০-এর বেশি প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছেন।
জানা গেছে, শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেত্রী থাকাকালে সুধা সদনে কাজ করতেন জাহাঙ্গীর। সেখানে আসা অতিথিদের পানি এগিয়ে দিতেন তিনি। ফলে তার নাম হয় পানি জাহাঙ্গীর। পরে প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। এ সময় তার ব্যক্তিগত কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন তিনি। তবে সরকারপ্রধানের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচয় দিতেন জাহাঙ্গীর। ঘুরতেন লাইসেন্স করা পিস্তল নিয়ে। নানা তদবির করে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন তিনি। নোয়াখালী ও ঢাকায় গড়েছেন বিপুল সম্পদ। এসব অভিযোগে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তাতে বলা হয়, জাহাঙ্গীরের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কোনো সম্পর্ক নেই। তার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে। প্রয়োজনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা নিতে বলা হয়। একপর্যায়ে রাজনীতির মাঠে নামেন পিয়ন জাহাঙ্গীর। চাটখিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদ বাগিয়ে নেন। পরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পাওয়ার জন্য নমিনেশন তোলেন। সেটি না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন। তবে পরবর্তী সময়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। নোয়াখালী-১ আসনের নৌকার প্রার্থী এইচ এম ইব্রাহীমের বিরোধিতা করেন জাহাঙ্গীর।
রাজধানীতে একাধিক প্লট-ফ্ল্যাট রয়েছে জাহাঙ্গীরের। রাজধানীর ধানমন্ডিতে তার স্ত্রীর নামে আড়াই হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট আছে। নোয়াখালীর মাইজদী শহরের হরি নারায়ণপুরে জাহাঙ্গীরের আট তলা বাড়ি রয়েছে। সেটিও তার স্ত্রীর নামে। এমপি হওয়ার জন্য বিপুল অর্থ খরচ করেন তিনি। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে বিশাল বহর নিয়ে করতেন সভা-সমাবেশ। বিভিন্ন সময়ে সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে নিজের এলাকায় দাওয়াত করে নিয়ে যান জাহাঙ্গীর। যাতায়াতের জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন তিনি। ধানমন্ডিতে আলিশান ফ্ল্যাট ছাড়া মোহাম্মদপুর ও নিউমার্কেটে দুটি দোকান রয়েছে তার। মিরপুরে সাত তলা ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জাহাঙ্গীরের। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় কৃষি খাত থেকে প্রতি বছর ৪ লাখ টাকা, বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে সাড়ে ১১ লাখ টাকা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে ৯ লাখ টাকা, চাকরি থেকে ৬ লাখ এবং অন্যান্য উৎস থেকে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা আয়ের তথ্য জানান তিনি। সবমিলিয়ে বছরে তার প্রায় ৫০ লাখ টাকার আয়ের কথা জানানো হয়।