জমিজমা নেই। এক টুকরো ভিটামাটি আর জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করা দায়। একই ঘরে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী স্বামী। সাত বছরের সন্তানটিও নানা রোগে আক্রান্ত।
তাদের চিকিৎসা ব্যয় ও আহার জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল সাফিয়া আক্তারের। এমন অবস্থায় তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। বিনা টাকায় প্রশিক্ষণ দিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ দেওয়া হয়েছে একটি সেলাই মেশিন। দেড় বছর আগে পাওয়া এই মেশিনই এখন বাঁচার অবলম্বন হয়েছে।
টানাপড়েনের সংসারে ফিরেছে কিছুটা সচ্ছলতা। সাফিয়া জানান, নিজে কিছু সেলাইয়ের কাজ জানতেন। দুঃসময়ে প্রয়োজন ছিল একটি সেলাই মেশিনের। অনেকের কাছে চেয়েও পাননি।
স্বপ্ন ছিল একটি সেলাই মেশিন কিনে আয় করবেন, কিন্তু কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছিল না। এমন সময় গ্রামেই সেলাই প্রশিক্ষণের আয়োজন করে বসুন্ধরা শুভসংঘ। তিন মাসব্যাপী এই প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে তিনি চমক সৃষ্টি করেন। কখনো কখনো প্রশিক্ষকের অনুপস্থিতিতে নিজেই অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন। তাঁর হাতের ছোঁয়ায় অল্প সময়ের মধ্যে অনেকেই আয়ত্ত করেন সেলাইয়ের সব ধরনের কাজ।
এর মধ্যে সেলাই মেশিন পেয়ে যান সাফিয়া। ঘরের এক কোণে মেশিন বসিয়ে কোমর বেঁধে কাজ শুরু করেন। স্থানীয় বাজারে খোলা জায়গায় অস্থায়ীভাবে শিশুদের নানা পোশাক বিক্রি করেন প্রতিবেশী আয়নাল হক। তাঁর সঙ্গে কথা বলেন সাফিয়া। বাজার থেকে কাপড় কিনে সেই কাপড় দিয়ে নানা ধরনের পোশাক তৈরি করে দেবেন। বিক্রি করে তবেই তাঁর পারিশ্রমিক দেবেন আয়নাল। এমন শর্তে শুরু হয় ব্যবসা। অল্পদিনেই ব্যাপক সাড়া পড়ে। এখন আরো পাঁচজন ব্যবসায়ীকে এভাবেই শিশুদের পোশাক তৈরি করে দেন সাফিয়া। প্রতি মাসে তাঁর আয় হয় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এখন তিনি নিজেই কাপড় কিনে আনেন। ওই কাপড় দিয়ে তৈরি করেন নানা পোশাক। আর নিজের বাড়ি থেকেই ক্রেতারা পাইকারিভাবে কিনে নেন। এতে আগের চেয়ে আয় বেড়েছে। অসুস্থ স্বামীর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে পারছেন। পারছেন সংসারের ব্যয় মেটাতে। ধীরে ধীরে স্বামী-সন্তান সুস্থ হচ্ছে।