কক্সবাজার জেলা বাংলাদেশের প্রধান পর্যটন নগরী। নদী-খাল, পাহাড়-সমুদ্র, সবুজ গাছগাছালীতে ভরপুর এই অপূর্ব সুন্দর স্থানটি। মায়াবী ও রূপময়ী কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতটি পৃথিবীর দীর্ঘতম অখণ্ডিত সমুদ্র সৈকত। বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পকে বিশ্ব দরবারে সমাদৃত করে দেয় আমাদের এই জেলা। অথচ কক্সবাজারের বর্জ্য অব্যবস্থাপনা, দূষণ সম্পর্কে উদাসীনতা, অসচেতনতায় পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছে আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশ। হুমকির মুখে আমাদের জীববৈচিত্র্য।
দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার শহরকে ময়লা-আবর্জনা এবং দুর্গন্ধের পরিবেশ থেকে রক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে ও অবিলম্বে বাঁকখালী নদী তীরের ‘ময়লার পাহাড়’ সরানোর দাবিতে বসুন্ধরা শুভসংঘ এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
আজ শনিবার বেলা ১১ টার দিকে শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের খুরুশকুল নতুন ব্রীজ সংলগ্ন ‘ময়লার পাহাড়’ এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচিটির আয়োজন করা হয়।
মানববন্ধন কর্মসুচিতে অংশগ্রহণকারীরা চোখে ও মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমরা চোখে দেখলেও ময়লার পাহাড় না দেখার জন্য কালো কাপড় ধারণ করেছি। প্রতিবাদ জানাতে জানাতে আমরা এখন ক্লান্ত হয়েই মুখে বেঁধেছি কালো কাপড়।’
কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, ‘কক্সবাজারের বাঁকখালী নদী তীরে গত দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে ময়লা-আবর্জনা নিক্ষেপের কারণে সেই ডিপোটি এখন পরিণত হয়েছে ‘ময়লার পাহাড়ে’। লোকজন এখন ময়লার ডিপোটিকে বলে থাকেন ‘ময়লার পাহাড়’।
তারা বলেন, ‘শহরটির শতশত বাসা-বাড়ির ময়লা-আবর্জনার সাথে শহরের অন্তত পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও সরকারি-বেসরকারি ১৫/২০টি হাসপাতালের মেডিকেল বর্জ্যও ফেলা হয় এই ময়লার পাহাড়ে। সেই পাহাড়ের স্তুপ থেকে ময়লা-আবর্জনা প্রতিনিয়ত নির্গত হয়ে আসছে বাঁকখালী নদীতে। বাঁকখালীর সেই দূষিত পানি গড়াচ্ছে সাগরে।’
‘দীর্ঘদিন ধরে সৃষ্ট ময়লার পাহাড়টির কারণে পুরো শহরেই গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়িত। এছাড়া, ময়লার পাহাড় সংলগ্ন খুরুশকুল নতুন ব্রিজ এলাকায় সকাল-সন্ধ্যা জমায়েত হয়ে থাকেন প্রচুরসংখ্যক লোক। এলাকায় হাঁটতে আসেন অনেক লোকজন। ময়লা-আবর্জনার গন্ধে ব্রিজ এলাকাটি বিষিয়ে উঠেছে। এখানেই রয়েছে কয়েকশ বছরের পুরানো বদরমোকাম মসজিদসহ অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মসজিদের মুসল্লি এবং শিক্ষার্থীদের নাকেমুখে কাপড় দিয়ে এখানে ইবাদত বন্দেগীসহ লেখাপড়া করতে হচ্ছে।’
সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে মানববন্ধন কর্মসূচির প্রতি একাত্বতা ঘোষণা করেন পরিবেশবাদী সংগঠন কক্সবাজার বন ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির সভাপতি দীপক শর্ম দীপু, ৩ নম্বর ওয়ার্ড মধ্যম সমাজ কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ ইব্রাহীম ও সাধারণ জনতা।
বসুন্ধরা শুভসংঘ কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি রাজিব দেবদাশের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আরাফাত সাইফুল আদরের পরিচালনায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন দৈনিক কালের কণ্ঠ’র কক্সবাজার অফিস প্রধান তোফায়েল আহমেদ, অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা শুভসংঘের কক্সবাজারের উপদেষ্টা দীপক শর্মা দীপু, শুভসংঘ কক্সবাজারের সদস্য আবছার উদ্দিন, মিথুন দাশ, আবদুল্লাহ আল মামুন, আবু ইউসুফ, আসিফ সাইফুল আবীর, মো. ইব্রাহিম, পিন্টু মল্লিক, মো. সালাউদ্দিন, নয়ন চক্রবর্তী, জয় চক্রবর্তী, দূর্জয় বড়ুয়া, মিথুন দাশ (২), মো. রিয়াজ উদ্দিন, প্রশান্ত মিত্র, মো. রায়হান, অগ্নিলা দেবদাস।
কক্সবাজারের সর্বস্থরের জন-সাধারণের অংশগ্রহণে এই কর্মসূচিতে কক্সবাজারের বাকখালী নদীসহ সকল খাল নদী দখলমুক্ত ও আবর্জনামুক্ত করে সমুদ্র সৈকতকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে দূষণরোধে জরুরিভাবে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানানো হয়।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ