ষাটোর্ধ্ব রাহেলা বেগম, সুফিয়া, বয়স পয়ষট্টি পেরিয়েছে লিয়াকত মিয়ার, রোজা না রাখা ৪ বছর বয়েসী আঁখি ও রাব্বি এ রকম বস্তিতে থাকা শতাধিক নানা বয়সী দুস্থদের সাথে নিয়ে এক অন্যরকম ইফতারের আয়োজন করেছিল আলোকিত মানুষ’র সদস্যরা।
'মানবতার সেবায় আর্তের পাশে'- স্লোগানকে ধারণ করে পথচলা রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আলোকিত মানুষ’।
সন্ধ্যা নামার আগমুহুর্তে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানা অফিসের পেছনে আগারগাও বস্তিতে হাতে হাতে খাবারের প্যাকেট নিয়ে হাজির হয় আলোকিত মানুষ’র একদল সদস্য। বস্তিবাসীর চিরচেনা সংগঠনটির এ সদস্যদের দেখে খানিক পরেই সদস্যদের ঘিরে ভিড় জমে ওঠে শতাধিক অসহায় মুখের। ইফতারির আর ৪ মিনিট বাকি, সবাইকে চক্রাকারে বসিয়ে সবার হাতে তুলে দেওয়া হলো চিকেন বিরিয়ানি ও জুস। প্যাকেট খুলতেই চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক, যেন প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে সবার। খাওয়া শেষে সবার তৃপ্তির ঢেকুর মন থেকে তৃপ্ত করেছে সংগঠনটির সদস্যদেরও।
কথা হলো, ফজল মিয়ার সাথে। নিজের সঠিক বয়স জানেন না তিনি। তবে বয়স যে সত্তরের কোঠা ছুঁয়েছে সন্দেহ নেই তাতে। রোজা রেখেছেন ফজল মিয়া। জিজ্ঞেস করা হলো, রোজা রাখতে কষ্ট হয় না? সোজাসাপ্টা উত্তর ‘ছোটকাল থেইক্যাই রোজা থাহি, অভ্যাস হয়া গেছে।’
‘খাবারটা অনেক মজা হইছে, তয় বেশি ভাল্লাগলো এত ছোট পোলাপান আমগো খাওয়ায় গেল।’ খাওয়ার পর এভাবেই স্বঅনুভুতি ব্যক্ত করছিলেন তিনি।
এসেছে ছোট্ট রাব্বি, রোজা রাখেনি সে। ড্যাবড্যাব চোখে তাকিয়ে ছিল খানিক দূর থেকেই। কাছে ডেকে পরম মমতায় তাকেও খাবার দিলেন সংগঠনটির এক মেয়ে সদস্য। খাাবার পেয়ে থামাথামি নেই, একদৌড়ে বাড়িতে। বস্তিতে খাবার নিয়ে যাওয়া হয়েছে কিন্তু বাদ রয়ে গেছে কেবল পানিটাই। সেখানকারই মেয়ে স্বপ্না, সেও স্বপ্ন দেখে হয়তো মানুষের জন্য কিছু করার। ইফতারির পরমুহুর্তে শুরু থেকে শেষ অবধি কোনরকম বিরক্তি না বরং আনন্দ নিয়েই সবাইকে পানি খাওয়ালো সে।
দুস্থদের সাথে নিয়ে ব্যতিক্রমী এরকম ইফতারের আয়োজন নিয়ে আলোকিত মানুষ’র সভাপতি আব্দুল্লাহ আল খোকনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে আমাদের কাজের ক্ষেত্রটাই হলো মানুষ বিশেষত আর্ত মানবতায়। প্রতিদিন তো নিজেরাই ইফতার করি একদিন না হয় এরকম দুস্থদের সাথে। সে চিন্তা থেকেই সদস্যদের সার্বিক অংশগ্রহণে এ ক্ষুদ্র প্রয়াস।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম