চিরচেনা ক্যাম্পাসে নেই প্রাণের স্পন্দন। সবই যেন এখন স্মৃতি হয়ে গেছে। যে বেঞ্চে বসে চলতো পড়াশোনা। সেখানে হয়তো আজ ধুলো জমে গেছে। ক্লাসের ওই বোর্ডটাও অপেক্ষায় আছে কবে তার বুকে মার্কারের আঁচড় পড়বে। সবাই অপেক্ষায় আছে এক সুস্থ পৃথিবীতে প্রাণ খুলে নিঃশ্বাসের জন্য।
লাল ইট-পাথরে গড়া প্রাণের সেই ক্যাম্পাস আছে, অথচ সেখানে নেই কোনো প্রাণের স্পন্দন। শিক্ষার্থীদের খুনসুটিতে মাতোয়ারা ছিল প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট। কিন্তু, সেখানে জমেছে স্বচ্ছ ধুলো আর একাকীত্বের ভিড়। প্রতিটি শিক্ষার্থীর পদচারণার আশায় অপেক্ষমাণ হয়ে আছে প্রিয় ক্যাম্পাস। হাহাকার আর নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে শ্রেণীকক্ষগুলোর প্রতিটি কোণায় কোণায়।
ক্যাম্পাস মানেই ক্লাস, পরীক্ষা আর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় দিন কাটানো। রাতের বেলা শহীদ শামসুল আলম হলের ছোট রুমে একটি নতুন ভোরের অপেক্ষা। সকালের নাস্তার টেবিলে অথবা সন্ধ্যায় মুক্ত বাতাসে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে কথার ফোয়ারা ক্যাম্পাসের নিয়মিত দৃশ্য। আবার কখনো রাতের ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে নির্ঘুম থাকা।
বলছি কবি নজরুল সরকারি কলেজের কথা। মহামারি করোনা কেড়ে নিয়েছে ক্যাম্পাসের রঙিন ওই দিনগুলো। এখনো ক্যাম্পাসে ভোরের আলো দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যার আকাশে মিলিয়ে যায়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অভাবে হাহাকার করে ওঠে সেই আলো।
করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে বিশ্ব আজ স্থবির। ভ্যাকসিন আবিষ্কারে স্বপ্ন দেখাচ্ছে বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর সব শক্তি যেন আজ পরাজিত। সারাবিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থা আজ স্তব্ধ। ইউনেস্কোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী করোনার প্রকোপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্ধ থাকার কারণে বিশ্বের মোট শিক্ষার্থীর ৯১ দশমিক ৩০ শতাংশ পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় মিলে আমাদের প্রায় পৌনে পাঁচ কোটি শিক্ষার্থী।
রবি ঠাকুরের ভাষায়, ‘মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে।’ কারণ পৃথিবী কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়। এই দুর্যোগও আমরা শিগগিরই কাটিয়ে উঠবো।
আষাঢ়ের কালিমাখা মেঘের মতোই আজ লক্ষ লক্ষ ক্যাম্পাস মাতোয়ারা শিক্ষার্থীর মনে কালো মেঘ এসে বাসা বেঁধেছে। সবাই প্রতীক্ষায় আছে, দুঃসময় কাটিয়ে আবার ফিরবো প্রাণের ক্যাম্পাসে। সবুজ ক্যাম্পাসে আবার ফিরবে তারুণ্যের স্পন্দন। নিস্তব্ধ শহীদ মিনার চত্বর, ক্যান্টিন, সবুজ মাঠ চত্বরে ফিরবে শিক্ষার্থীরা। আসবে প্রাণের ছোঁয়া। হাসি-গল্প-গানে মুখরিত হবে প্রিয় ক্যাম্পাস।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর