১৬ অক্টোবর, ২০২০ ১৪:৩৪

রাবিতে তদন্ত কমিটিতে ঝুলে আছে শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

রাবিতে তদন্ত কমিটিতে ঝুলে আছে শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক বিষ্ণু কুমারের বিরুদ্ধে দুই ছাত্রীর যৌন হয়রানির অভিযোগ তদন্ত কমিটিতেই ঝুলে আছে। অভিযোগের সোয়া এক বছর অতিক্রম হয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে তদন্ত কমিটি ছাড়া আর কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। অভিযোগের এতদিন পরেও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ না হওয়ায় ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কার মধ্যে পড়েছেন অভিযোগকারী দুই শিক্ষার্থী।

অভিযোগকারী এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেখতে দেখতে ১ বছর ৩ মাস কেটে গেল। কিন্তু কোনও সমাধান পেলাম না। কিন্তু কেন? একটা জিনিসের সত্যতা প্রমাণে একবছরের বেশি সময় লাগে? আমি দ্রুত সুষ্ঠু বিচার চাই।

এর আগে গত বছরের ২৫ জুন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের চতুর্থবর্ষের এক ছাত্রী এবং ২৭ জুন দ্বিতীয় বর্ষের আরেক ছাত্রী ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক বিষ্ণু কুমারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ ইনস্টিটিউটের পরিচালকের কাছে যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগ দায় করেন। এরপর ইনস্টিটিউটের পরিচালক আবুল হাসানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। 

অভিযোগকারী দুই শিক্ষার্থীকে তাদের অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য শিক্ষক নানাভাবে চাপ দেন উল্লেখ করে গত ২৮ জুন নগরীর মতিহার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন শিক্ষার্থীরা। পরে ৩ জুলাই ইনস্টিটিউটের স্নাতক পর্যায়ের চারটি বর্ষের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে তাকে অব্যাহতি দেয় অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল।
এর আগেও সান্ধ্যকোর্সের কয়েক ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছর অভিযুক্ত শিক্ষককে ওই ব্যাচের কার্যক্রম থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় বলে আইইআর সূত্রে জানা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, ২০১২ সালে ‘নারী ঘটিত’ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মীর আব্দুল কাইয়ুম ইন্টারন্যাশনাল ডরমেটরি থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়।

এছাড়াও বিষ্ণুকুমার অধিকারীর বিরুদ্ধে পছন্দের শিক্ষার্থীকে নম্বর বাড়িয়ে অপছন্দের শিক্ষার্থীদের নম্বর কমিয়ে দেওয়া, চেম্বারে ডেকে হয়রানি, ফেইসবুকে বিভিন্ন ব্যাচের গ্রুপের কথপোকথনের স্ক্রিনশট নিয়ে হয়রানিরও অভিযোগ রয়েছে বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের গঠিত তদন্ত কমিটি ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পায়।

গত বছরের ২১ জুলাই আইইআর ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ বিষয়টি নিশ্চিত করে কমিটির আহ্বায়ক ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আবুল হাসান চৌধুরী বলেছিলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অভিযোগের সত্যতার আলামত মিলেছে। যৌন হয়রানির বিষয়ে হাইকোর্ট যে ধরনের ব্যাখ্যা দিয়েছে তার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের মিল রয়েছে এবং কমিটি তার সত্যতা পেয়েছে। ওই দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষকের কথা-বার্তা, অঙ্গভঙ্গি এবং আচরণ যৌন হয়রানির মতোই ছিল বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।’

এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। সেই কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌসকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে তদন্ত শেষ না করেই অদৃশ্য এক কারণে তিনি তদন্ত কমিটি থেকে অব্যাহতি নেন।

এরপর নতুন আরও একটি তদন্ত কমিটি করা হয় চলতি বছরের মার্চের ৩০ তারিখ । সেই কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর রেজিনা লাজকে এবং সদস্য সচিব করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রহমতুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক রোকসানা বেগমকে।

নতুন তদন্ত কমিটি হওয়ার ছয় মাস অতিক্রম হলেও সেই তদন্ত কমিটি তাদের তদন্তের কোনও ধরনের অগ্রগতি করতে পারেনি বলে জানা গেছে।

এদিকে নতুন তদন্ত কমিটি থেকে সদস্য সচিব রোকসানা বেগম অব্যাহতি নেবেন বলেও জানা গেছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, পারিবারিক বিভিন্ন ঝামেলার কারণে তদন্ত কাজে আমি সহায়তা করতে পারছি না। সে কারণে আমি মাননীয় উপাচার্য স্যারকে জানিয়ে কমিটি থেকে অব্যাহতি নেব।

তবে তদন্ত প্রতিবেদন আর কিছু দিনের মধ্যেই জমা দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক রেজিনা লাজ।

তিনি বলেন, আমরা তদন্ত কাজ অনেকটা গুছিয়ে নিয়েছি। করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। তাই আমরা মার্চ মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত তেমন কোনও কাজ করতে পারেনি। তবে গত আগস্ট মাস থেকে আমরা কাজ শুরু করেছি। এর মধ্যে আমরা কয়েকটা মিটিং করেছি। আশা করছি দ্রুত আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।

বিডি প্রতিদিন/কালাম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর