বরেণ্য কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে কথাসাহিত্যিকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বরে অবস্থিত সমাধিতে এই শ্রদ্ধা জানানো হয়। এসময় দর্শন বিভাগসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনও শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে গণমাধ্যমকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক ছিলেন বাংলা সাহিত্যের রাজপুত্র। একজন অসাম্প্রদায়িক মানুষ। তিনি লেখনি ও প্রকাশনার মাধ্যমে অনন্য সৃষ্টি করে গেছেন। তার লেখার যে ধারণা ও চিন্তা, সেটা মানুষ সংলগ্ন সবকিছু আছে। তিনি মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখেছেন। মহান মানুষটি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষক ছিলেন। এটা আমাদের গর্বের বিষয়। তার চলে যাওয়ায় আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি। তার লেখনি এবং বাণী আমাদের অনুপ্রাণিত করে। তাকে স্বরণীয় করে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কাজ করছে।
দুই বাংলার সাহিত্যচর্চায় বিশেষ করে সাহিত্যের জগতে হাসান আজিজুল হক এক অবিস্মরণীয় নাম। কথাসাহিত্যের বরপুত্র হিসেবে পরিচিত উপমহাদেশের অন্যতম প্রধান এই কথাসাহিত্যিকের লেখায় দেশভাগ, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, শ্রেণিচেতনা, দাঙ্গা, দুর্ভিক্ষ, পাকিস্তানি দুঃশাসন, বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধোত্তর চার দশকের বহু বিস্তৃত অনুষঙ্গ ঠাঁই পেয়েছে। তিনি লেখালেখি ছাড়া সাংগঠনিকভাবেও সক্রিয় থেকেছেন সব সময়। দেশের নানা ক্রান্তিকালে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয় সাংগঠনিক কর্মতৎপরতার মাধ্যমে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন এই বরেণ্য কথাসাহিত্যিক।
হাসান আজিজুল হকের এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তার গল্প ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু, রুশ ও চেক ভাষায় অনূদিত হয়েছে। কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক তার সুঠাম গদ্য ও মর্মস্পর্শী বর্ণনাভঙ্গির জন্য প্রসিদ্ধ। তার রচিত উল্লেখ্যযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে-আত্মজা ও একটি করবী গাছ (১৯৬৭), জীবন ঘষে আগুন, হাসান আজিজুল হকের শ্রেষ্ঠ গল্প (১৯৯৫), আগুন পাখি (২০০৬) ও সাবিত্রী উপাখ্যান (২০১৪), উঁকি দিয়ে দিগন্ত (২০১১), একাত্তর: করতলে ছিন্ন মাথা ইত্যাদি। ‘তরলাবালা’ হাসান আজিজুল হকের সর্বশেষ প্রকাশিত উপন্যাস।
সাহিত্যে অবদানের জন্য বহু গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার পেয়েছেন হাসান আজিজুল হক। ১৯৬৭ সালে ‘আদমজী পুরস্কার’ পান, ১০ বছরের মাথায় ১৯৭০ সালে পান বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার। এছাড়া আলাওল পুরস্কার (১৯৮৩), ফিলিপস পুরস্কার (১৯৮৮) এবং ১৯৯৯ সালে পান বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মানজনক বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক। ২০০৮ সালে কলকাতার সম্মানজনক ‘আনন্দ পুরস্কার’ পান আগুনপাখি উপন্যাসের জন্য, ২০১৪ সালে বাংলাদেশের ‘জেমকন সাহিত্য পুরস্কার’ ও ২০১৬ সালে ‘হুমায়ূন আহমেদ স্মৃতি পুরস্কার’ পান।
সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ভারতের আসাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি’তে ভূষিত হয়েছেন অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক। ২০১৮ সালে তাকে একটি বেসরকারি ব্যাংকের পক্ষ থেকে ‘সাহিত্যরত্মা’ উপাধি দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের বেসামরিক পর্যায়ে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘স্বাধীনতা পদক’-এ ভূষিত হন প্রখ্যাত এই কথাসাহিত্যিক।
বিডি প্রতিদিন/এমআই