দীর্ঘ দশ বছর পর আগামীকাল চট্টগ্রামে জনসভায় যোগ দিতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে ঘিরে চট্টগ্রাম জুড়ে চলছে উৎসবের আমেজ। চলছে শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জা এবং প্রচার প্রচারণা। ধারণা করা হচ্ছে এ জনসভায় ১০ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটবে। ফলে ভঙ্গ হবে অতীতের জনসভায় লোক সমাগমের সকল রেকর্ড।
প্রধানমন্ত্রী সর্বশেষ চট্টগ্রামে জনসভায় এসেছিলেন ২০১২ সালের ২৮ মার্চ। সেদিন তিনি পলোগ্রাউন্ডে ১৪ দলের মহাসমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন। ১০ বছর ৯ মাস পর একই মাঠে আবার ভাষণ দেবেন তিনি। নানা কারণে চলতি ডিসেম্বরকে দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর এ জনসভাকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে নগরীর পলোগ্রাউন্ডে এ জনসভা অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘রবিবার পলোগ্রাউন্ড মাঠে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভা হবে এটি। করোনা উত্তর এ জনসভা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রয়েছে। জনসভায় ১০ লাখের অধিক মানুষ সমবেত হবে। পলোগ্রাউন্ড ময়দান ছাপিয়ে জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে।’
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. ছাহান মাহমুদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে উপলক্ষে চট্টগ্রাম জুড়ে উৎসব শুরু হয়েছে। ব্যাপক সাড়া জেগেছে। মানুষের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। পলোগ্রাউন্ডে আমাদের জনসভায় মাঠ পূর্ণ করে মাঠে বাইরে আরো আট-দশ গুণ মানুষ হবে।’
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার সকালে ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে সামরিক বাহিনীর একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ-২০২২ এ অংশগ্রহণ করে সালাম গ্রহণ করবেন। ওই অনুষ্ঠান শেষ করে প্রধানমন্ত্রী দুপুরে হেলিকপ্টারে করে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে আসবেন। স্টেডিয়াম থেকে গাড়িতে করে প্রধানমন্ত্রী পলোগ্রাউন্ডে জনসভায় যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভার স্থলকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এরই মধ্যে ১৬০ ফুট লম্বা নৌকার আদলে সভামঞ্চ তৈরি করা হয়েছে পলোগ্রাউন্ড মাঠে। জনসভাকে ঘিরে নগরীর বিভিন্ন সড়কে নিমার্ণ করা হয়েছে বণার্ঢ্য তোরণ। টাঙানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ব্যানার ও পোস্টার। দলীয় প্রধানকে স্বাগত জানাতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা নগরীর বায়েজিদ, ষোলশহর ২নং গেইট, জিইসি, লালখান বাজার, টাইগার পাস, জামাল খান, কাজির দেউরি, দেওয়ান হাট, কদমতলী, নিউমার্কেট, আন্দরকিল্লাসহ পুরো নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিলবোর্ড, ব্যানার, বেলুন, ফেস্টুন এবং পোষ্টার টানিয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নগরীর বিভিন্ন এলাকার সড়কের সৌন্দয্য বর্ধনের পাশাপাশি ফুটপাত পরিষ্কার, রং করা, ফ্লাইওভারগুলো আলোকসজ্জিত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম সফরে ৩০টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৪টি প্রকল্পের ভিত্তিস্তর স্থাপন করবেন। এ জন্য জনসভার মঞ্চের পাশে ভিত্তিফলকগুলো স্থাপন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। পিছিয়ে নেই নেতারাও। তারা ইতোমধ্যে জনসভার মাঠ পরিদর্শন করেছেন এবং প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। সর্বশেষ প্রস্তুতি পরখ করতে পলোগ্রাউন্ড মাঠে ছুঁটে গেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ এমপি, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, উত্তর জেলা সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালাম প্রমুখ।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশ হচ্ছে পলোগ্রাউন্ডে। প্রধানমন্ত্রীর জনসভা ঘিরে আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি সমাপ্তির পথে। আশা করি, এবার জনসভায় লোক জমায়েতে অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।’
সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে ঘিরে নিরাপত্তা প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। জনসভার নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে এসএসএফ, পিজিএফ, পুলিশসহ সাড়ে সাত হাজারের অধিক ফোর্স। কঠোর নিরাপত্তায় থাকছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা, ডোনসহ অত্যাধুনিক নিরাপত্তা প্রযুক্তি।’
বিডি প্রতিদিন/হিমেল