বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের দুটি ছাত্রাবাসে অস্ত্রের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অস্ত্রের মহড়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিবাদমান ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ গত সোমবার মধ্য রাতে পুলিশের সামনে লাঠিসোটা এবং ধারালো অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষের উপর হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ কঠোর অবস্থানে না গিয়ে সশস্ত্র ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করে। তবে দুটি ছাত্রাবাস থেকে তারা কোন অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি।
গত সোমবার রাত ৯টায় মেডিকেল কলেজের অডিটরিয়ামে চলমান মেডিসিন ক্লাবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এরপর পুলিশ উভয় পক্ষের মাঝে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখে। পুলিশের উপস্থিতিতেই রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে অস্ত্রের মহড়ায় মেতে উঠে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে করে ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ওইদিন অস্ত্রের মহড়া শুরু হয় দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে। কলেজ কর্তৃপক্ষ বিবাদমান ছাত্রলীগের জেবুন্নেছা আফরোজ এমপি গ্রুপের নেতাকর্মীদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে ১নম্বর ছাত্রাবাসের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা সাদিক আবদুল্লাহ অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা কোন কিছুতেই কলেজ অধ্যক্ষের অনুরোধ শোনেনি। তারা ওই রাতে ২নম্বর ছাত্রাবাসের সামনে অবস্থান নেয়। রাত বৃদ্ধির সাথে সাথে দুটি ছাত্রাবাস থেকে পাল্টা-পাল্টি অস্ত্রের মহড়ায় তারা মেতে উঠে। এ সময় এক ছাত্রাবাস থেকে ফ্লোরে (মেঝে) ধারালো অস্ত্র এবং লাঠিসোটা দিয়ে ঠন ঠনানি, ঝন-ঝনানি শব্ধ করায়, আরেক ছাত্রাবাস থেকে মেঝেতে ধারালো অস্ত্র ঘষে শব্ধ করে পাল্টা উত্তর দেয়া হয়। এভাবে প্রায় ১৫ মিনিট চলার পর পুলিশের উপস্থিতিতে লাঠিসোটা এবং ধারালো অস্ত্র নিয়ে ২নম্বর ছাত্রাবাসের ছাত্রলীগ (সাদিক অনুসারী) নেতাকর্মীরা ১নম্বর ছাত্রাবাসে হামলা চালায়। তারা বেশ কিছুক্ষণ ১নম্বর ছাত্রাবাসের সামনে তাণ্ডব চালানোর পর এমপি অনুসারী ১নম্বর ছাত্রাবাসের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তারা এক পর্যায়ে লাঠিসোটা এবং ধারালো অস্ত্র নিয়ে সাদিক অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ২নম্বর ছাত্রাবাসে ঢুকিয়ে দেয় এবং সেখানে বেশ কিছুক্ষণ তারা তাণ্ডব চলায়। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ ক্যাম্পাসে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। সংঘর্ষে পুলিশের একজন এসআই এবং ছাত্রলীগের দুই কর্মী আহত হয়।
রাত ২টার দিকে কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ভাস্কর সাহা, হোস্টেল সুপার ডা. এসএম সরোয়ার এবং মেট্রো পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) গোলাম রউফ খান ক্যাম্পাসে যান। এ সময় ১নম্বর ছাত্রাবাসের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা অধ্যক্ষ ভাস্কর সাহাকে প্রকাশ্যে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করে। এ সময় পুলিশ ১নম্বর ছাত্রাবাসের মধ্যে ঢুকতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রতিরোধের মুখে ব্যর্থ হয়।
এরপর পুলিশ এবং কলেজ অধ্যক্ষ ২নম্বর ছাত্রাবাসে প্রবেশ করেন। তবে তারা কোন কক্ষ তল্লাশি না করে কিংবা প্রদর্শিত অস্ত্র উদ্ধার না করেই কিছুক্ষণের মধ্যে ছাত্রাবাস থেকে বেরিয়ে যায় পুলিশ। ছাত্রলীগের দুই গ্রুপই প্রতিপক্ষ গ্রুপের কাছে অস্ত্রের বিপুল মজুদ রয়েছে বলে দাবি করেছে। তবে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি পুলিশ।
কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. ভাস্কর সাহা বলেন, একমাস পর কলেজে পরীক্ষা রয়েছে। এ অবস্থায় কোন ভাবেই ক্যাম্পাস বন্ধ রাখা যাবে না। পুলিশ প্রশাসনকে বলা হয়েছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে। কলেজে লেখাপড়ার পরিবেশ বজায় রাখতে পুলিশ যে কোন ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে বলে জানান অধ্যক্ষ।
নাম না প্রকাশের শর্তে মেট্রো পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ছাত্রলীগের দুই গ্রুপই আত্মরক্ষায় ধারালো অস্ত্রের সমাহার ঘটিয়েছে। এসব অস্ত্র প্রদর্শনও হয়েছে। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষের সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকলে পুলিশ ইচ্ছে করলেই ছাত্রাবাসে প্রবেশ করতে পারে না। তবে ফের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি রোধে ক্যাম্পাসে পুলিশ সতর্ক রয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
বিডি-প্রতিদিন/২৫ নভেম্বর, ২০১৫/মাহবুব