ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে পায়রা এবং চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় মাইকিং করে এবং দুটি করে পতাকা টানিয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের সতর্ক রেখেছে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি)। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণসহ দুর্যোগ পরবর্তী সহায়তার জন্য নগদ অর্থ ও ত্রাণ মজুদ আছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক আবদুল কুদ্দুস জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় ১১ নম্বর বুলেটিন অনুযায়ী চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৩০ কিলোমিটার পশ্চিম দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ২৯৫ কিলোমিটার এবং মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ২৫০ কিলোমিটার ও পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ২১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল প্রবল ঘূর্ণিঝড় হামুন। ঝড়টি কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার, যা দমকা ও ঝড়ো হওয়া আকারে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি আরও উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শেষ রাত থেকে সকাল নাগাদ মেঘনা মোহনার নিকট দিয়ে বরিশাল ও চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
এর প্রভাবে বরিশালসহ উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টি এবং দমকা ও ঝড়ো হওয়া বয়ে যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভোলা উপকূলে ৩ থেকে ৫ ফুট জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। পায়রা ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত এবং অভ্যন্তরীণ নদী বন্দরে ২ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এ কারণে বন্ধ রয়েছে অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল। বরিশাল নদী বন্দরে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার পর অভ্যন্তরীণ ও স্থানীয় রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ। এ কারণে বিপাকে পড়েছে নিয়মিত যাত্রীরা।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে নৌ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল নদী বন্দরের ট্রাফিক পরিদর্শক মো. কবির হোসেন। ২ নম্বর সংকেতে ঢাকাগামী চলাচল করলেও সম্ভাব্য বিপদের আশঙ্কায় নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ ঢাকাগামী লঞ্চ ছাড়তে নিষেধ করেছেন বলে জানান বরিশাল-ঢাকা রুটের এমভি পারাবাত লঞ্চের সুপারভাইজার নজরুল ইসলাম। লঞ্চ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা।
সম্ভাব্য বিপদের আশঙ্কায় বিভিন্ন স্থানে দুটি করে পতাকা টানানো ও মাইকিং করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির উপ-পরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন। বিভাগে প্রায় অর্ধলাখ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতসহ উপকূলীয় ও চরাঞ্চলে মাইকিং করা হয়েছে। জনমনে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রশাসন নানা প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম। দুর্যোগ পরবর্তী সহায়তার জন্য নগদ অর্থসহ পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে, সবশেষ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে মঙ্গলবার বিকেলে বরিশাল সার্কিট হাউজে বিভাগীয় পর্যায়ের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপকূলীয় জনগণকে রাত ৮টার মধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। এ ছাড়া সরকারের সব দপ্তরকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকত আলী।
বিডি প্রতিদিন/এমআই