কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে। তারা আসলে ব্যবসায়ী নয়, মুনাফালোভী। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে সব ব্যবসায়ীকে সমান সুযোগ প্রদান করা উচিত।
আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকাস্থ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)-এ ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি কর্তৃক "বিগত সরকারের সৃষ্ট সিন্ডিকেট বাজার অস্থিরতার জন্য দায়ী" শীর্ষক এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বক্তরা এসব কথা বলেন।
বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান জনাব হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। বিতর্ক প্রতিযোগিতায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কমকর্তাসহ ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির সদস্যবৃন্দ, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ, বিতর্কিকগণ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
"বিগত সরকারের সৃষ্ট সিন্ডিকেট বাজার অস্থিরতার জন্য দায়ী" শীর্ষক এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের বিতার্কিকগণ অংশগ্রহণ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান তার বক্তব্যের শুরুতেই বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজক ডিবেট ফর ডেমোক্রেসিসহ অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ, বিতর্কিকগণ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দকে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, বিতর্ক প্রতিযোগিতার বিষয়টি সময়োপযোগী। আমি বিতর্ক প্রতিযোগিতাটি উপভোগ করেছি এবং সমৃদ্ধ হয়েছি। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অতীতের ধারাবাহিকতায় ভোক্তাদের অনুকূলে কিছু কাজ করছে যার সুফল ভোক্তাগণ পাচ্ছেন।
তিনি বিখ্যাত দার্শনিক এরিস্টটলের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, রাষ্ট্র হলো উত্তম কোন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সমবায়। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে পণ্যের মূল্য সীমাবদ্ধ রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সে লক্ষ্যে অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে।
মহাপরিচালক বলেন, আজকের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় দুই পক্ষই যুক্তিসঙ্গতভাবে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। তিনি সুশাসনের ছয়টি উপাদানের বলতে গিয়ে বলেন আইনের শাসন অনুপস্থিত থাকলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সুশাসন নিশ্চিত করতে সমাজ সংস্কারের পাশাপাশি প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কার করা প্রয়োজন। তিনি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীগণ অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেদের সমৃদ্ধ করবে এবং দেশ ও জাতিকে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করে তার বক্তব্য শেষ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর মানুষের অনেক আশা ভরসার জায়গা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে দ্রব্যমূল্য সহনশীল পর্যায়ে আনতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক, ভ্যাট ও রেগুলেটরি ট্যাক্স অব্যাহতি দিয়েছে। ডিম, পিয়াজ, চাল, চিনি, ভোজ্যতেলের ওপর শুল্ক অব্যাহতি প্রদান করা হয়। ডিমের ওপর শুল্ক কমিয়ে ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন অধিক আমদানির ফলে খামারীগণ আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি না হয়। ভোজ্যতেল ও চিনির ওপরও আমদানি শুল্ক ও আবগারি কর কমানো হয়েছে। আমরা এনবিআরের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। কিন্তু শুল্ক কমানোর পরও এর পুরোপুরি সুবিধা এখনো ভোক্তারা পাচ্ছে না।
আসন্ন রমজানে নিত্য-প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকার চিনি, গম, ভোজ্যতেলসহ ৫/৬টি পণ্যের ওপর এলসি'র মার্জিন উঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এটি আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে। তারা আসলে ব্যবসায়ী নয়, মুনাফালোভী। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে সব ব্যবসায়ীকে সমান সুযোগ প্রদান করা উচিত।
বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রস্তাবের পক্ষে ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি ও বিপক্ষে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, কুমিল্লা এর বিতার্কিকগণ অংশগ্রহণ করেন।
প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা, সাংবাদিক মো: আলমগীর হোসেন, সাংবাদিক ইকবাল আহসান এবং সাংবাদিক আতিকুর রহমান।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি'র আয়োজনে“বিগত সরকার সৃষ্ট সিন্ডিকেটই বাজার অস্থিরতার জন্য দায়ী” শীৰ্ষক ছায়া সংসদে প্রস্তাবের পক্ষের সরকারি দল বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি, প্রস্তাবের বিপক্ষের বিরোধী দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত