রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। তিব্বত হল দখলকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সাত জন শিক্ষক, তিন সাংবাদিক, ছয় পুলিশসহ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রতিহত করতে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বেদখল হল উদ্ধার ও নতুন হল নির্মাণের দাবিতে আজ রবিবার সকাল ৯টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) তিন ফটকে তালা ঝুঁলিয়ে বাইরে অবস্থান নেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম আন্দোলনের নেতৃত্ব পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার ও তাঁতীবাজারে এই বিক্ষোভ মিছিল করে জবির শিক্ষার্থীরা। তারপর দীর্ঘ দিন অবৈধ দখলে থাকা তিব্বত হল উদ্ধারের দাবিতে আন্দোলনরত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা সদরঘাটে অবস্থিত হলটির সামনে অবস্থান নিলে পুলিশ তাদের বাঁধা দেয়। বাধা ভেঙ্গেই তিব্বত হলের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা চালায় শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট ছোড়ে। বেশ কয়েক রাউণ্ড টিয়ারসেলও নিক্ষেপ করে। শিক্ষার্থীরাও ইট পাটকেল দিয়ে পুলিশের উপর পাল্টা আক্রমণ চালায়। বেলা সাড়ে ১২টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে।
হামলা পাল্টা হামলায় পুলিশের গুলিতে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক নাসিরউদ্দিন আহমেদসহ আরও তিনজন শিক্ষক গুলিবিদ্ধ হন। এছাড়া পুলিশের গুলিতে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম ও আলোকিত বাংলাদেশের চিত্রসাংবাদিক মুইদ খন্দকার আহত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সামিয়া ইসলাম বলেন, ছাত্রী কমন রুমে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করায় কমন রুমে থাকা প্রায় ৮০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
সকালেই ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে লালবাগ জোনের ডিসি হারুনের নেতৃত্বে শতশত পুলিশ অবস্থান নেয়। কিছুক্ষণ পর পর ক্যাম্পাসে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ছে পুলিশ। সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদেরকে সুমনা হসপিটাল, বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার এবং বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অশোক কুমার সাহা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক। তাই তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে না।’
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুনীরুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ছাত্ররা হল দখল করতে গেলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হবে। তাই সংঘর্ষ এড়াতে টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট ছোড়া হয়েছে।
এদিকে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আজ তিব্বত হল উদ্ধার করে সেখানে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে হলের দাবিতে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা।