সোমবার, ১৩ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঋণখেলাপিদের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারের দাবি বাম জোটের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যাংক লুটেরা ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচার করার দাবি জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশে তারা এ দাবি জানায়। বাম জোটের সমন্বয়ক বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক প্রমুখ।

, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক, বাচ্চু ভূঁইয়া, সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, হাসান তারেক চৌধুরী, বাসদ নেতা মোশারফ হোসেন নান্নু, শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, মানস নন্দী প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে অর্থ মন্ত্রণালয় ঘেরাও করার জন্য বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে হাই কোর্ট মোড় হয়ে পুরানা পল্টন থেকে জিরো পয়েন্টে গেলে পুলিশ তাদের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়। মিছিলকারীরা সেখানে বসে আবারও সমাবেশ করেন। সমাবেশে বক্তারা বলেন, যারা ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছেন, তাদের ক্ষমা করে দেওয়া হচ্ছে। সরকার এই লুটেরাদের জন্য বিশেষ সুবিধা ঘোষণা করতে যাচ্ছে। অথচ সারা দেশে পাটকল শ্রমিকরা বেতন পাচ্ছেন না। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। তারা বলেন, মাত্র পাঁচ হাজার টাকার জন্য কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে সরকার। সারা দেশে কয়েক লাখ কৃষকের বিরুদ্ধে এই মামলা হয়েছে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী, আপনি ঋণখেলাপিদের ঋণ মওকুফ করার ঘোষণা দিয়েছেন। ঋণখেলাপিদের ঋণ মওকুফ করার জন্য দায়িত্ব আপনাকে কে দিয়েছে? আপনি কোন ক্ষমতাবলে, কোন নির্দেশনায় ব্যাংক লুটেরাদের সুবিধা দেওয়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন? আমরা এ উদ্যোগের নিন্দা জানাই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখছি, অনেকে ঋণখেলাপি হতে চায়। ঋণখেলাপি হতে পারলে আর কোনো টাকা ফেরত দিতে হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা উড়ে যায় ফিলিপাইনসহ বিদেশের জুয়ার আড্ডায়। আমাদের এখানে রাষ্ট্রীয় কোষাগারগুলো খালি করে দেওয়া হয়েছে লুটপাটের জন্য, দুর্নীতির জন্য। অন্যদিকে কৃষকদের ৫০০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ আদায়ের জন্য তাদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ৬৭ হাজার মামলা করা হয়েছে। সরকার নামমাত্র এ কৃষিঋণ মওকুফ করার পরিবর্তে লুটেরাদের বাড়তি সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। আমরা সরকারকে বলেছি, এ তৎপরতা অবিলম্বে বন্ধ করুন।’

তিনি বলেন, লুটপাট করে দেশের বাইরে সেকেন্ড হোমের নামে অর্থ পাচার করছে। তারা কয়েক মাসে হাজার কোটি টাকা শেয়ার মার্কেট থেকে সরিয়ে নিয়েছে। এ দুর্নীতিবাজদের টাকা বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকে থাকে না। কানাডা থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেকেন্ড হোম মনে করে তারা গাড়ি, বাড়ি, ব্যবসার নাম করে এ টাকা বাইরে পাচার করে। রাষ্ট্রীয় কোষাগারে হরিলুট চলছে। কিন্তু কারও বিরুদ্ধে দেখলাম না দুদক থেকে কোনো মামলা করতে, ব্যবস্থা নিতে। তিনি বলেন, ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে যদি এ ঋণ উদ্ধার করতে না পারেন, তাহলে অবিলম্বে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে অর্থমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে।

সিপিবি সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম বলেন, ঋণখেলাপিদের আরও সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হচ্ছে আগামী বাজেটে। ডাউন পেমেন্টে ঋণ স্থিতির ১ শতাংশ অথবা ১ কোটি টাকার মধ্যে যেটি কম সেটি জমা করেই খেলাপি ঋণ নবায়ন বা পুনঃ তফসিল করা যাবে। ঋণ পরিশোধে ১৫ বছর সময় দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ ১৫ বছরের মধ্যে দুই বছর ঋণের কিস্তি পরিশোধে এক টাকাও খরচ করতে হবে না। ঋণ পুনঃ তফসিলের ক্ষেত্রে ৭ শতাংশ সরল সুদহার হবে। সরকারি ব্যাংক লুট করে একটি বড় গোষ্ঠী ব্যাংকিং খাত দখল করেছে। বিসমিল্লাহ গ্রুপ কয়েক হাজার কোটি টাকা লুট করে দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এসব ঘটেছে। এই ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। সেই ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার করতে হবে।

বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, দেশের আজ এক লাখ কোটি টাকার বেশি খেলাপি ঋণ। অনিয়ম জালিয়াতি করে ঋণ নিয়ে আর ফেরত দেওয়া হচ্ছে না। শীর্ষ ঋণখেলাপিদের বসানো হয়েছে সরকারের উচ্চ পদে। তারা উচ্চ পদে বসে আরও লুটপাটের ষড়যন্ত্র করছে। কোনো খেলাপিকে ছাড়া দেওয়া যাবে না। তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। যারা জনগণের টাকা লুট করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

সর্বশেষ খবর