মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ করা প্রিয়া সাহার বাড়ি পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার চরবানিয়ারী গ্রামে। তার এমন কর্মকান্ডে সেখানকার খোদ হিন্দু সম্প্রদায়ের ভিতরই ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। চরবানিয়ারী গ্রামে গিয়ে সেখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাদের ক্ষোভের কথা। তাদের দাবি, প্রিয়া সাহার বক্তব্য সঠিক নয়, ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য তিনি এ কাজ করেছেন। এলাকায় দুটি পক্ষের মধ্যে রয়েছে জমি নিয়ে বিরোধ। এ বিরোধে সুবিধা নিতে এমন বক্তব্য দিয়েছেন প্রিয়া সাহা। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে প্রিয়া সাহার বানোয়াট অভিযোগের পর তার মানবাধিকার সংগঠন ‘সুনাম’ থেকে একযোগে পদত্যাগ করেছেন সদস্যরা। পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার চরবানিয়ারী গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে পাশর্^বর্তী বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার বাসিন্দাদের সীমানা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। এ দুই পক্ষের লোকজনের অধিকাংশই হিন্দু সম্প্রদায়ের। চলতি বছরের শুরুতে চরবানিয়ারীতে প্রিয়া সাহার ভাই জগদীশ চন্দ্র বিশ্বাসের একটি অব্যবহৃত ঘরে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এর আগের দিন অপর পক্ষের কয়েকটি বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
এ দুটি পক্ষের একটিতে রয়েছেন বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান শামীম এবং অপর পক্ষে রয়েছে প্রিয়া সাহার পরিবার। এলাকায় এ দুই পক্ষের রয়েছে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য। তবে স্থানীয় নিরপেক্ষদের দাবি, প্রিয়া সাহার ভাইয়ের ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনাটি সাজানো। মূলত অপর পক্ষের কয়েকটি বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কাউন্টার মামলা দেওয়ার জন্য জগদীশ সাহার ঘরে আগুনের ঘটনা সাজানো হয়। তাদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, এ বিরোধ সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত জায়গা-জমি নিয়ে। এর সঙ্গে ধর্মের বা রাজনীতির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। প্রিয়া সাহা দেশের বাইরে গিয়ে যে মিথ্যাচার করেছেন তা অন্যায়।
স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান শামীম ও তার বাহিনী এ এলাকায় কয়েক বছর ধরে প্রভাব বিস্তার করে নিরীহ লোকজনের ওপর অত্যাচার চালিয়ে আসছেন। কিন্তু এটি কেবল জায়গা নিয়ে বিরোধে। এর সঙ্গে ধর্মীয় বা রাজনৈতিক কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। কেননা মুজিবুর রহমান শামীমের পক্ষেও অনেক হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক রয়েছেন।
এদিকে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘শারি’র অধীন ও অর্থায়নে পরিচালিত প্রিয়া সাহার সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন সুরক্ষা, নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা (সুনাম)। তার এ মানবাধিকার সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেছেন পিরোজপুর কমিটির সদস্যরা। গতকাল দুপুরে সদর উপজেলা কমিটির সদস্যরা পিরোজপুর প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে একযোগে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
অন্যদিকে প্রিয়া সাহার বক্তব্যে ক্ষোভ জানিয়েছেন পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা। পিরোজপুর জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক চন্দ্রশেখর দাস বলেন, ‘প্রিয়া সাহার এ বক্তব্য ব্যক্তিগত। হয়তো তিনি কোনো সুবিধা নেওয়ার জন্য এ অভিযোগ করেছেন। প্রিয়া সাহার কারণে আমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরাই বিব্রত। আমরা দাবি জানাব, তিনি যেন তার বক্তব্য প্রত্যাহার করেন।’
পিরোজপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার গৌতম নারায়ণ চৌধুরী বলেন, প্রিয়া সাহার বক্তব্য কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।
নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রিয়া সাহার ভাইয়ের বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল ঠিক। তবে কারা এ আগুন দেয় তা আমি বলতে পারব না। এখানে জায়গা-জমি নিয়ে পাশ্বর্বর্তী বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার লোকজনের সঙ্গে বিরোধ আছে। আগুনের ঘটনা সে বিরোধ নিয়ে।’
নাজিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অমূল্য রঞ্জন হালদার বলেন, ‘নাজিরপুরে কোনো সংখ্যালঘু নির্যাতন বা গুমের ঘটনা নেই। প্রিয়া সাহার বক্তব্য নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য এবং উসকানিমূলক।’
পিরোজপুরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোল্লা আজাদ হোসেন বলেন, ‘প্রিয়া সাহার অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট। এ ধরনের কোনো ঘটনা পিরোজপুর জেলার কোথাও ঘটেনি। পিরোজপুরের পুলিশ প্রশাসন সাম্প্রদায়িক যে কোনো বিষয় সব সময়ই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণ করে। নাজিরপুর উপজেলায় বা পিরোজপুরের কোথাও কোনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন গুম হয়নি। দেশের বাইরে গিয়ে যে কোনো নাগরিকের উচিত দেশ সম্পর্কে ভেবেচিন্তে কথা বলা।’
স্থানীয় সংসদ সদস্য ও গৃহায়ণমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে কেউ ধর্মীয় বিবেচনায় নির্যাতনের শিকার হন না। পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মুসলমান-হিন্দুদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। নাজিরপুরের একজন হিন্দুও বা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের কোনো লোক গুম বা নিখোঁজ হয়নি। প্রিয়া সাহার বক্তব্য অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সাম্প্রদায়িক সম্পর্ক নষ্টের উসকানিমূলক অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।’