দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ও শুভানুধ্যায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান। তিন দফা নামাজে জানাজা শেষে গতকাল গ্রামের বাড়ি বগুড়ার সারিয়াকান্দি ঈদগাহ সংলগ্ন কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয় একাত্তরের এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে।
এর আগে সকালে রাজধানীতে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত শনিবার সকালে রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। বগুড়া-১ আসন থেকে টানা তিনবারের এমপি জীবদ্দশায় সংসদ ভবনে এসেছেন অসংখ্যবার। গতকাল সকালেও তিনি এসেছিলেন, তবে লাশবাহী গাড়িতে করে। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীকে শেষ বিদায় দিতে সেখানে দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে হাজির হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রিসভার সদস্যগণ, এমপি ও জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। সকাল ১০টায় ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জাতীয় পতাকায় মোড়া এই বীর মুক্তিযোদ্ধার কফিনকে গার্ড অব অনার প্রদানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয়। এরপর সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দীর্ঘ দিনের সহকর্মী আবদুল মান্নানের কফিনে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় তার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এর আগে এই বীরের কফিনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষ থেকে তার সামরিক সচিব ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া এবং চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরীসহ হুইপবৃন্দ মরহুমের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলের জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষে আরেকটি পুষ্পস্তক মরহুমের কফিনে অর্পণ করেন।
এ সময় বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, হুইপ ইকবালুর রহিম, সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, হুইপ আতিউর রহমান আতিক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সংসদ সদস্যবৃন্দ, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহমান, বিএম মোজাম্মেল হক, বাহাউদ্দিন নাছিম, এস এম কামাল হোসেন, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, রিয়াজুল কবির কাওছার, আনিসুর রহমান, সাহাবুদ্দিন ফরাজি, আনোয়ার হোসেনসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পরে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার পক্ষে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা মরহুমের কফিনে পুষ্পস্তক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। জানাজার আগে মরহুমের সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত পাঠ করেন হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। পরে মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
এরপর বেলা সাড়ে ১২টায় সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে তার মরদেহ বগুড়ার সোনাতলা সরকারি মডেল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে নেওয়া হয়। প্রিয় নেতাকে এক নজর দেখার জন্য পার্শ্ববর্তী গাবতলী, সাঘাটা, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমায়। সেখানে জানাজা শেষে মরদেহ সারিয়াকান্দি উপজেলার ডিগ্রি কলেজ মাঠে নেওয়া হয়। সেখানে বিকাল সাড়ে ৪টায় জানাজা শেষে স্থানীয় জনগণ তার মরদেহে ফুলেল শ্রদ্ধা জানায়। ঢাকা থেকে মরদেহ বগুড়ায় নিয়ে যান জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন ও সাখাওয়াত হোসেন শফিক।
পৃথক দুটি উপজেলায় জানাজার আগে আবদুল মান্নান এমপির সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবন নিয়ে বক্তব্য রাখেন ও ফুলেল শ্রদ্ধা জানান, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, সাখাওয়াত হোসেন শফিক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডাক্তার মকবুল হোসেন, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, মরহুমের স্ত্রী ও সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাদারা মান্নান, প্রয়াত এমপির ছোট ভাই জাহিদুল ইসলাম রাজু, উপজেলা চেয়ারম্যান মুনজিল আলী সরকার, মরহুমের ছেলে প্রভাষক সাখাওয়াত হোসেন সজল, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ডাবলু, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মুঞ্জুরুল আলম মোহন, আসাদুর রহমান দুলু, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন নবাব, জাতীয় পার্টির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) জিল্লুর রহমান, সোনাতলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি জাহিদুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা মো. শোকরানা, উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মিনহাদুজ্জামান লিটনসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ।
এ সময় বগুড়া জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ, পুলিশ প্রশাসন, বগুড়া প্রেস ক্লাব, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা আওয়ামী লীগ, জেলা ছাত্রলীগ, প্রেস ক্লাবসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করে। শোক প্রকাশ করে শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান বগুড়া-১ আসনের সাবেক এমপি আলহাজ কাজী রফিকুল ইসলাম।