বৃহস্পতিবার, ২৬ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

থামছেই না বিপদযাত্রা

করোনাঝুঁকি নিয়ে ঠাসাঠাসি করে মানুষ ছুটছে গ্রামে

আরাফাত মুন্না

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সরকার ছুটি ঘোষণা করলেও তা মানছে না কেউ। রেল, নৌ ও আকাশপথে যাত্রী পরিবহন বন্ধ করেও থামানো যায়নি বিপদ যাত্রা। আজ বৃহস্পতিবার থেকে সড়ক পথেও গণপরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে, তাই গতকাল সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত রাজধানীর সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসে ঠাসাঠাসি করেই ঢাকাবাসী ছুটেছেন গ্রামের পথে। গাড়িতে ওঠার হুড়োহুড়িতে করোনায় সংক্রমিত হওয়া রোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনাও মানেনি কেউ। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে টার্মিনালগুলোতে কোনো উদ্যোগও দেখা যায়নি। গণপরিবহন না পেয়ে কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে গাড়ি ও বাস ভাড়া করেও গ্রামে গিয়েছে বলে জানা গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণপরিবহন ব্যবহার ও জনসমাগমের ফলে করোনাভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁঁকি বাড়ছে। ঢাকা থেকে ঠাসাঠাসি করে গ্রামে যারা যাচ্ছেন, তারা নিজের পরিবারের সঙ্গে গোটা গ্রামকেও ঝুঁকিতে ফেলছেন। এদিকে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী ফেরি ঘাট ও দৌলদিয়া-পাটুরিয়া ফেরি ঘাটেও যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। কোনো কোনো ফেরিতে যাত্রীর চাপে গাড়িও উঠতে পারেনি বলে জানিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধিরা। ফেরিতে ওঠাকে কেন্দ্র করে ঘাটে যাত্রীদের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। ধাক্কাধাক্কাতি পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন অনেকে। গতকাল সরেজমিন         সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, কাউন্টারে বসার ঠাঁই নেই। বিভিন্ন গন্তব্যে ছুটে যাওয়া কোনো বাসেই আসন ফাঁকা নেই। উল্টো বাসের ভিতর আলাদা চেয়ার বসিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ছুটছে বাস। করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষের মধ্যে যেমন সচেতনতা নেই, তেমনি বাসের চালক ও সহকারীদের মধ্যেও নেই। চাপাচাপি করে যাত্রী বোঝাই করে ছুটছে এসব বাস।

 ঈদের মতো গাদাগাদি করে দেশের পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে ছুটে যাচ্ছে বাসগুলো। হিমালয়, হিমাচল, রয়েল, শ্যামলী ও হানিফ পরিবহনসহ সব বাসেই উপচে পড়া ভিড়। সরকার জনসমাগম না করতে নির্দেশ দিলেও সেটা মানছেন না কেন, এমন প্রশ্নে চট্টগ্রামগামী যাত্রী মো. আশরাফুল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কেউ তো মানছে না। সবাই তো বাড়ি ফিরছে। তাহলে আমরা গেলে সমস্যা কোথায়। পাশে থাকা তার স্ত্রী আসমা বলেন, করোনা আসলে এমনিতেই আসবে, এটা নিয়ে চিন্তা করি না। ছুটি যেহেতু পেয়েছি, তাই বাড়িতে গিয়েই কদিন নিরাপদে থাকি। হিমালয় পরিবহনের টিকিট বুকিং সহকারী এনামুল হক বলেন, যাত্রী আসলে তো আমরা ফিরিয়ে দিতে পারি না। সবাইকে নিয়ে যেতেই হয়। বাসে যাত্রীর অনেক চাপ। তিন মিটার দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ দিলেও বাসে গাদাগাদি করে যাত্রী নিচ্ছেন কেন জানতে চাইলে চট্টগ্রামগামী একটি বাসের সহকারী আবদুর রহমান বলেন, যাত্রীর চাপ বেশি। সবাই যেতে চায়, না নিয়ে কেমনে যাই বলেন।

শুধু সায়েদাবাদ নয় মহাখালী আন্তজেলা বাস টার্মিনালের চিত্র একই। এ টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহ, জামালপুর, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা, শেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুড়িগ্রামগামী বাস কাউন্টারগুলোতে ব্যাপক ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এ সুযোগে ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন কয়েকজন যাত্রী। এখানে যাত্রীদের হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হলেও যাত্রীদের কারওই যেন সেই সময় নেই। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কাপড় দিয়ে সেলাই করা মাস্ক বিতরণ করলেও অল্প কিছুক্ষণ সময়েই তা শেষ হয়ে যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী তিতাস ট্রান্সপোর্ট কাউন্টারের যাত্রী মোবারক হোসেন বলেন, কাজকাম সব বন্ধ। ঢাকায় থাকলে না খেয়ে মরতে হবে। তাই বাড়িতে যাচ্ছি।

একই চিত্র গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনালেরও। প্রতিটি কাউন্টারেই যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। গাদাগাদি করেই টার্মিনাল ছাড়ছে বাসগুলো।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর