শুক্রবার, ১১ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে কমছে খাল, বাড়ছে জলাবদ্ধতা

প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও নগরের খালগুলো দখল-ভরাট ও দূষণের শিকার হচ্ছে

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে কমছে খাল, বাড়ছে জলাবদ্ধতা

ভারি বৃষ্টি হলেই চট্টগ্রাম নগরীতে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। ছবিটি আগ্রাবাদ এক্সেস রোড এলাকা থেকে তোলা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

চট্টগ্রাম মহানগরের অভ্যন্তরে প্রতিনিয়তই কমছে ছোট-বড় খাল। দখল-ভরাটের কবলে কমছে খালের সংখ্যা। খাল কমার কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বৃষ্টির পানির প্রবাহ। ফলে বর্ষাকালে ভারি বৃষ্টি হলেই তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এর সঙ্গে আছে নালা-নর্দমা ও ড্রেন দখলের প্রতিযোগিতা।

অভিযোগ আছে, প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও নগরের খালগুলো দখল-ভরাট ও দূষণের শিকার হচ্ছে। খালপাড়ের প্রভাবশালীরা নানাভাবে দখল করে নিচ্ছে। দখলের কারণে প্রতিনিয়তই ছোট হয়ে আসছে খালের প্রস্থ। সরকারি সংস্থা অভিযানে স্থাপনা ভেঙে দিলেও পরবর্তী সময়ে তা আবারও তৈরি করা হয়। ফলে বাধাগ্রস্ত হয় পানিপ্রবাহ। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বঙ্গোপসাগর, কর্ণফুলী ও হালদা নদী ঘিরে চট্টগ্রাম মহানগরের অবস্থান। ভৌগোলিকভাবে সাগর-নদীবেষ্টিত হওয়ায় পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা হচ্ছে না। পক্ষান্তরে চট্টগ্রাম মহানগরের অভ্যন্তরে কয়টি খাল আছে এর সঠিক সংখ্যা নেই কোনো সংস্থার কাছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক), চট্টগ্রাম ওয়াসা, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে খাল নিয়ে ভিন্ন তথ্য আছে। চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পে নগরে ৩৬টি খালের কথা বলা হয়েছে। চসিকের কাছে আছে ৫৭টি খালের তথ্য। সিডিএর মেগা প্রকল্পেও ৫৭টি খালের কথা উল্লেখ করা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে ৫৬টি খালের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত খাল ১৩টি, কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ৩৩টি ও হালদা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খাল ১০টি। তবে অতীতে চট্টগ্রাম নগরে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৮২ দশমিক ২৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ১১৮টি খাল থাকার রেকর্ড রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত অর্ধশত খাল অস্তিত্বহীন। 

সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, মেগা প্রকল্পে ৩৬টি খালের সংস্কার-উন্নয়ন কাজ করা হচ্ছে। তবে এটা ঠিক, ইতিমধ্যে অনেক খাল বিলীন হয়ে গেছে। খাল কমার কারণে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। তিনি বলেন, নগরের অধিকাংশ খালই দখল-ভরাটে ক্ষতবিক্ষত। গৃহস্থালি বর্জ্যগুলো ফেলা হয় খালে। খাল পরিষ্কার করার পর সেখানে আবারও ফেলা হয় বর্জ্য। এ ব্যাপারে নাগরিকদের সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) চট্টগ্রাম দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা বলেন, মহানগরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে মোট ৫৬টি খালের কথা উল্লেখ আছে। এসব খালের মুখে সিডিএ ও পাউবো স্লুইস গেট ও ভেন্ট স্লুইস স্থাপন করছে।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগর থেকে পানি সরাসরি প্রবাহিত হয়ে কর্ণফুলী নদীতে পড়ে মূলত ১০টি খাল দিয়ে। এগুলো হলো চাক্তাই খাল, রাজা খাল, বিবি মরিয়ম খাল, কলাবাগিচা খাল, ফিরিঙ্গিবাজার খাল, বাকলিয়া খাল, মহেশ খাল, বোট ক্লাব খাল ও ডোমখালী খাল। কিন্তু এসব খালের অধিকাংশ স্থান দখল-ভরাটের কবলে। ২০ ফুট প্রস্থের খাল এখন হয়ে গেছে ১০ ফুটের। খালের পাড়ে নির্মিত হয়েছে বহুতল ভবন। প্রতিষ্ঠা হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। খাল দখল করে ভবন করেছে স্বয়ং সিটি করপোরেশন। ফলে প্রতিটি খালেরই এখন মরণদশা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর