বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

ঢাকায় মোটরসাইকেল ছিনতাই করে চুয়াডাঙ্গায় নিয়ে বিক্রি

নিজস্ব প্রতিবেদক

আবদুর রশিদ। বয়স ৩২ বছর। বাড়ি পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের লিফটম্যান ও ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন। পাশাপাশি সময় পেলে নিজের মোটরসাইকেল দিয়ে রাইড শেয়ার পাঠাও-এর কাজ করেন। এটি ছিল তার বাড়তি আয়ের মাধ্যম। কিন্তু তার এই বাড়তি আয়ই কাল হয়ে দেখা দিয়েছিল। ছিনতাইকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যায় আবদুর রশিদ। ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা আবদুর রশিদকে কুপিয়ে জখম করে মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এই চক্রের সদস্যরা দিনে টাইলস মিস্ত্রি এবং রাতে ছিনতাইকারী রূপে আবির্ভূত হয়। বর্ণচোরা চক্রটি ছিনতাই করা মোটরসাইকেল ঢাকা থেকে নিয়ে চুয়াডাঙ্গায় বিক্রি করত। সম্প্রতি ছিনতাইকারী ওই চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতারের পর এমনই তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান জানান, ছিনতাই চক্রে তিনজন জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক ছিনতাই ও চুরির মামলা রয়েছে। তারা ছিনতাইয়ের জন্য খুন ও ভুক্তভোগীকে গুরুতর জখম করে ফেলে। এই চক্রের খপ্পরে পড়েছিল আবদুর রশিদ।

গত ১২ মে সন্ধ্যায় আবদুর রশিদ কুড়িল চৌরাস্তায় মোটরসাইকেল নিয়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এক যুবক তাকে ৭০ টাকায় ভাড়া করে। গন্তব্য পূর্বাচলগামী ৩০০ ফিট এক্সপ্রেসওয়ে। পরে এলোপাতাড়ি ঘুরে সময়ক্ষেপণ করে। দীর্ঘ সময় ঘোরাঘুরি করার জন্য ৭০ টাকার পরিবর্তে ১৫০ টাকা ভাড়া দাবি করে আবদুর রশিদ। আরোহী যুবক রাজি হয়ে যায়। ঘোরাঘুরি শেষে আরোহী যুবক মোটরসাইকেলে অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের কাছে যায়।

সেখানে অপেক্ষায় ছিল আরও দুই যুবক। যুবকদের একজন ১০০০ টাকার নোট দেখিয়ে ভাড়া দিতে চায়। বাইকার রশিদ খুচরা নেই বলে জানায়। তিন যুবক খুচরা টাকা খোঁজাখুঁজির একটা পর্যায়ে বাইকার রশিদের মাথায়, হাঁটু, ঊরু এবং গোড়ালিতে এলোপাতাড়ি হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে আব্দুর রশিদ মাটিতে পড়ে যায়। তখন তিন ছিনতাইকারীর একজন চাপাতি দেখিয়ে আব্দুর রশিদকে চুপ থাকতে বলেন। অন্যজন স্যুইচগিয়ার দিয়ে আবদুর রশিদের গলা কাটতে যায়।

আবদুর রশিদ ভয়ে চিৎকার করে। কিন্তু পাশ দিয়েই যেতে থাকা শত শত চলন্ত গাড়ির কেউ তার সহযোগিতায় এগিয়ে আসে না। গলা কাটতে না পেরে ছিনতাইকারীরা আবদুর রশিদের পিঠের বাম পাশে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত স্যুইচ গিয়ার দিয়ে সজোরে আঘাত করলে রক্তাক্ত হয়। হাতুড়ি ও ধারালো ছুরির আঘাতে আবদুর রশিদ নিস্তেজ হয়ে পড়েন।

তিন ছিনতাইকারী ভাবে পাঠাও চালক আবদুর রশিদ মারা গেছেন। এই ভেবে তারা আবদুর রশিদকে টেনে ৩০০ ফিট রাস্তার পাশের খালে ফেলে দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় পুলিশ আবদুর রশিদকে খাল থেকে উদ্ধার করে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসা শেষে ভুক্তভোগী খিলক্ষেত থানায় মামলা করেন।

ওই মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ছিনতাইকারীদের চিহ্নিত করা হয়। গতকাল দুপুরে ভাটারা এবং মিরপুর-১৪ নম্বর এলাকা থেকে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- মো. রানা ওরফে রিদয় ও মো. উজ্জ্বল আলী। পরবর্তীতে আসামিরা ছিনতাইয়ের বিষয় স্বীকার করে। পরে তাদের নিয়ে ৩০০ ফিট এলাকা গিয়ে ব্যবহৃত চাপাতি এবং হাতুড়ি জব্ধ করা হয়।

ডিবি কর্মকর্তা মশিউর আরও বলেন, গ্রেফতার দুজন ফেনসিডিলে আসক্ত এবং ইতিপূর্বেও তারা চুরি ছিনতাই করেছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। পাঠাও এর একটি মোটরসাইকেল ছিনতাই করার জন্য তারা একাধিকবার ভাটারা, কুড়িল বিশ্বরোড এবং পূর্বাচলগামী এক্সপ্রেসওয়ে রেকি করেছে।

ছিনতাই করা মোটরসাইকেলটি তারা চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় নিয়ে যায়। সেখানে দালাল নয়নের কাছে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করে। পরে সে মোটরসাইকেলটিও উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত অপর আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

সর্বশেষ খবর