শুক্রবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ছুটি নিয়ে আইসিবির ডিজিএমের কারাভোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

অর্থ আত্মসাতের মামলায় কারাভোগ করেছেন ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) উপ-মহাব্যবস্থাপক ও রাজশাহীর শাখা প্রধান আবদুল মোত্তালিব। তবে নিজের কারাভোগের সময়কে তিনি ছুটি হিসেবে দেখিয়েছেন। অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নিয়ে ছুটি শেষে তিনি ফিরেছেন অফিসে। তবে তার কারাভোগ সম্পর্কে কিছুই জানে না আইসিবি কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, ২৭ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় এ বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর আবদুল মোত্তালিবকে কারাগারে পাঠান সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের বিচারক। সেদিন থেকেই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন তিনি। গত ২৮ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত তাকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেয়। এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান। এরপর আবার নিয়মিত অফিস শুরু করেন। যে মামলায় এই কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানো হয়, তার বাদী রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার কানোপাড়া সাজুরিয়া এলাকার মৎস্যচাষি আবদুল বারিক মন্ডল। পুঠিয়ার তাহেরপুর অ্যাগ্রো লিমিটেডের পরিচালক তিনি। এ প্রতিষ্ঠানের নামে ইকুইটি অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ফান্ড (ইইএফ) থেকে ৯৩ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ মঞ্জুর করে আইসিবি।

 কিন্তু ভুয়া নথিপত্র তৈরি করে ঋণের প্রথম কিস্তির ২৭ লাখ টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন পুঠিয়ার মঙ্গলপাড়া গোবিন্দপাড়া এলাকার গোলাম মোর্শেদ হক (৩৫)। এ ঘটনায় তাকে সহায়তা করেন আইসিবির ডিজিএম ও রাজশাহী শাখার প্রধান আবদুল মোত্তালিব ও প্রধান কার্যালয়ের এজিএম আহম্মদ হোসেন। পরে এই তিনজনের বিরুদ্ধে আবদুল বারিক মন্ডল দুর্নীতি দমন আইনে রাজশাহীর সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাশেদুল ইসলাম। অর্থ আত্মসাৎ ছাড়াও কোম্পানির ৬০ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতির বিষয়টিও তদন্তে উঠে আসে।

                আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ সেপ্টেম্বর জামিন চেয়ে আসামি গোলাম মোর্শেদ হক ও আবদুল মোত্তালিব আদালতে হাজির হন। কিন্তু দীর্ঘদিন পলাতক থাকায় জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। তবে উচ্চ আদালতে তারা ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান। এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে দুজনই ছাড়া পান।

                অনুসন্ধানে জানা যায়, আবদুল মোত্তালিব ১৬ সেপ্টেম্বর অফিসের হাজিরা খাতায় সই করে বেরিয়ে যান। সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। এর পরের দুই দিন ছিল শুক্র ও শনিবার, অর্থাৎ সরকারি ছুটি। সে হিসেবে ১৯ সেপ্টেম্বর রবিবার থেকে কর্মস্থল ত্যাগের অনুমতিসহ ১২ দিন অর্জিত ছুটির আবেদন করেন তিনি। অর্থাৎ কারাগারে যেতে হবে, এটি নিশ্চিত হয়েই সে অনুযায়ী ছুটির দরখাস্ত জমা দেন এই কর্মকর্তা। আইসিবির রাজশাহী শাখার হাজিরা খাতার তথ্যে দেখা যায়, ১৯ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবদুল মোত্তালিবের স্বাক্ষরের ঘরে লাল কালিতে অর্জিত ছুটি (ইএল) লেখা আছে। ছুটির আবেদনে এই কর্মকর্তা লিখেছেন, পৈতৃক জমি ভাগ-বাটোয়ারা, খাজনা পরিশোধ ও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণসহ পারিবারিক কাজে তিনি নাটোরে গ্রামের বাড়িতে যাবেন। সে জন্যই তার ছুটি প্রয়োজন। তবে ছুটিতে তিনি গ্রামের বাড়ি যাননি।

                ঘটনা সম্পর্কে জানতে আইসিবির উপ-মহাব্যবস্থাপক আবদুল মোত্তালিবের অফিসের নম্বরের ফোন করা হলে মৃণাল কান্তি নামের একজন সেটি রিসিভ করেন। তিনি নিজেকে কর্মকর্তা পরিচয় দেন। এরপর ফোন করার কারণ উল্লেখ করে আবদুল মোত্তালিবের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি অপেক্ষা করতে বলেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে বলেন, ‘স্যার অসুস্থ। তিনি এখন কথা বলতে পারবেন না। পরে আপনাকে জানানো হবে।’

                প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কিসমাতুল আহসান জানান, বিষয়টি তাকে কেউ জানায়নি। তবে এমন ঘটনা ঘটে থাকলে সেটা অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে। এ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর