শনিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা

চার্জ দিতে প্রতিদিন ৯৬ হাজার কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হয়

রাহাত খান, বরিশাল

দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা

ব্যাটারিচালিত ২৪ হাজার রিকশা ও অটোরিকশা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বরিশাল মহানগরীতে। এসব রিকশার ব্যাটারি চার্জ দিতে প্রতিদিন ৯৬ হাজার কিলোওয়াট (ইউনিট) বিদ্যুত খরচ হয়। ব্যাটারি চার্জিংয়ের অনুমোদিত পয়েন্ট না থাকলেও মালিকরা এসব রিকশার ব্যাটারি চার্জ দিয়ে থাকেন তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়। ট্রাফিক বিভাগ বলছে, আগে এগুলো অবৈধ থাকলেও হাইকোর্টের সাম্প্রতিক এক আদেশে মহাসড়ক ব্যতীত সব সড়কে চলতে পারবে ব্যাটারিচালিত রিকশা-অটোরিকশা। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না ট্রাফিক বিভাগ। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, নগরীতে ব্যাটারিচালিত হলুদ অটোরিকশা চলছে ১২ হাজার এবং রিকশায় ব্যাটারি ইঞ্জিন লাগিয়ে চলছে আরও ১২ হাজারের বেশি।

অটোরিকশা চালক মো. নজরুল ইসলাম জানান, একটি হলুদ অটোরিকশায় ১২ ভোল্টের ৫টি ব্যাটারি থাকে। অপরদিকে ব্যাটারিচালিত রিকশায় ব্যাটারি থাকে ৪টি। অটোরিকশা মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, একটি হলুদ অটোরিকশা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চার্জ দিলে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ টাকার বিদ্যুত খরচ হয়। গ্যারেজে ব্যাটারি চার্জ দিলে খরচ হয় ১৫০ টাকা। বরিশাল নগরীতে চলাচলকারী বেশিরভাগ হলুদ রিকশা অটোরিকশা এবং ব্যাটারিচালিত রিকশা অনেক পুরনো বলে তিনি জানান। বরিশাল ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমজাদ হোসেন জানান, একটি ব্যাটারিচালিত হলুদ অটোরিকশার (৫টি) ব্যাটারি চার্জ দিতে প্রতিদিন অন্তত ৫ কিলোওয়াট (ইউনিট) বিদ্যুৎ খরচ হয়। অপরদিকে ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যাটারি (৪টি) চার্জ দিতে প্রায় ৩ কিলোওয়াট (ইউনিট) বিদ্যুৎ খরচ হয়। সে হিসেবে ১২ হাজার হলুদ অটোরিকশা চার্জ দিতে ৬০ হাজার কিলোওয়াট এবং ১২ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যাটারি চার্জ দিতে ৩৬ হাজার কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হয়। অর্থাৎ বরিশাল নগরীতে প্রতিদিন হলুদ অটোরিকশা এবং ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যাটারি চার্জ দিতে মোট ৯৬ হাজার কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হয়। যা দিয়ে একটি ছোটখাটো শিল্প চলতে পারে। এসব যানের ব্যাটারী চার্জ বন্ধ করা গেলে বিদ্যুত সাশ্রয় হবে বলে স্বীকার করেন তিনি। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক (প্রশাসন) আব্দুর রহিম বলেন, সম্প্রতি ট্রাফিক বিভাগের সাথে এক সভায় সিটি মেয়র জানিয়েছেন নগরীতে ১২ হাজার হলুদ অটোরিকশা চলছে। আরও ১২ হাজার রিকশায় ইঞ্জিন আর ব্যাটারি লাগিয়ে চালানো হচ্ছে। আগে ব্যাটারিচালিত এসব যান অবৈধ ছিল। ট্রাফিক বিভাগ তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারতো। সম্প্রতি হাইকোর্ট মহাসড়ক ব্যতীত সর্বত্র ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও রিকশা চলাচলের বৈধতা দিয়েছে। তার মানে এখন আর ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা অবৈধ নেই। এ অবস্থায় এসব যানের বিরুদ্ধে ট্রাফিক বিভাগ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে কিনা জানতে চাইলে ট্রাফিক পরিদর্শক আবদুর রহিম বলেন, কোনো যানবাহন ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করলে তার কাগজ জব্দ করে মামলা দেয় ট্রাফিক বিভাগ। কিন্তু ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশার বৈধ কাগজ না থাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করলে সেগুলো আটক করা হয়। পরে আবার নির্ধারিত জরিমানা দিয়ে সেগুলো ছাড়িয়ে নেন মালিকরা। সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহমেদ বলেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় শৃঙ্খলা ফেরাতে সম্প্রতি সিটি মেয়র নগরীতে ৫ হাজার টোকেন দিয়েছেন। এসব যানের ব্যাটারি চার্জ দিতে প্রতি ওয়ার্ডে একটি করে চার্জিং পয়েন্ট করে দেবেন মেয়র। ব্যাটারি চার্জে বিদ্যুৎ অপচয়ের বিষয়ে সিটি মেয়রের সঙ্গে আলোচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে সিটি করপোরেশন।

সর্বশেষ খবর