চট্টগ্রাম বন্দর নগর ও বাণিজ্যিক রাজধানী। অথচ স্বাধীনতার পাঁচ দশক পার হলেও আধুনিক ও স্মার্ট সিটির ছোঁয়া লাগেনি। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি নামেই, কিছু সড়ক সম্প্রসারণ-উন্নয়ন হলেও যানজট নিত্যসঙ্গী। প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার চারটি প্রকল্প চলমান থাকলেও জলাবদ্ধতা নগরবাসীর কপালের লিখন। ১৯৫৯ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর আর কোনো সাধারণ বা বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ হয়নি। নগরে মাত্র ৯টি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়। অবকাঠামোগত কিছু উন্নয়ন হলেও চট্টগ্রামের সমান্তরাল ও সুষম উন্নয়ন হয়নি। তবে এবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন স্মার্ট সিটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে চট্টগ্রামকে দেশের প্রথম স্মার্ট সিটি গঠনের। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খেলাধুলা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ-এ পাঁচটি ইস্যুতে দৃশ্যমান পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। স্মার্ট সিটি রূপান্তরের ধারণা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে ১৫ মিনিটের সচিত্র প্রেজেন্টেশন। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অর্ধশত সংস্থা-দফতরকে দেওয়া হয়েছে স্মার্ট সিটি গঠনে নিজস্ব আইডিয়া-পরামর্শ প্রদানের চিঠি। সংস্থাগুলোর সঙ্গে করা হচ্ছে পৃথক মতবিনিময়। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে। মহানগর ও ১৫ উপজেলা থেকে পাওয়া ১২২টি আইডিয়ার মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত করা হয়েছে ৫০টি। স্মার্ট সিটি নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে বুটক্যাম্প। এর মাধ্যমে বদলে দেওয়া হচ্ছে চট্টগ্রামকে। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, কথা বা কাল্পনিক নয়, প্রকৃত অর্থেই চট্টগ্রামকে স্মার্ট সিটি করা হবে। এ লক্ষ্য নিয়েই গত কয়েক মাস ধরে কাজ করছি। ইতোমধ্যে অর্ধশত সংস্থাকে স্মার্ট সিটি প্রতিষ্ঠায় নিজেদের আইডিয়া, সামর্থ্য ও অভিজ্ঞতা নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সবাই ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন। সবার সহযোগিতা পেলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই চট্টগ্রামকে স্মার্ট সিটিতে রূপান্তর করা সম্ভব হবে। চট্টগ্রামই হবে দেশের প্রথম স্মার্ট সিটি। এখানে বড় অঙ্কের টাকা বা প্রকল্পের দরকার নেই। দরকার কেবল ইতিবাচক মানসিকতা, দেশ ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে খেলার মাঠকে খেলার জন্য ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। উচ্ছেদকৃত আউটার স্টেডিয়ামকে আধুনিকায়ন করা হবে। নতুন রূপ দেওয়া হবে পলোগ্রাউন্ড মাঠকে। চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় হবে খেলার মাঠ কাম সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র। ১৯১টি ইউনিয়নেও হবে নতুন খেলার মাঠ, সঙ্গে বয়স্কদের বসা ও হাঁটার জায়গা। প্রতিটি উপজেলা থেকে নেওয়া হয়েছে নতুন তিনটি করে আইডিয়া। ব্যতিক্রমী আইডিয়া প্রদানকারী সেরা তিনটি উপজেলাকে দেওয়া হবে পুরস্কার। সর্বোপরি আমরা চট্টগ্রামকে একটি মানসম্মত, আধুনিক, উন্নত ও স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। চট্টগ্রাম হবে পেপার লেস, প্রেজেন্ট লেস ও ক্যাশ লেস সিটি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নগরের সব মাঠকে খেলার জন্য উন্মুক্ত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আউটার স্টেডিয়াম-সংলগ্ন ফুটপাথের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। পলোগ্রাউন্ড মাঠকে খেলার জন্য ফিরিয়ে দিতে সম্মত হয়েছে রেলপথ সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কর্ণফুলী নদীর নাব্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বন্ধ করা হচ্ছে পলিথিনের ব্যবহার। ১ জুলাই থেকে কেউ পলিথিন ব্যবহার করতে পারবে না। নগরের সরকারি ও ব্যক্তিগত পুকুর-জলাশয় আর কেউ ভরাট বা বেদখল করতে পারবে না। জেলা প্রশাসন প্রতিটি পুকুরের পাড়ে ওয়াকওয়ে বানাবে। নগরের ছয়টি সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসকে দেওয়া হয়েছে পুকুর-জলাশয়ের তালিকা করার দায়িত্ব।
১৫টি উপজেলা থেকে নেওয়া হয়েছে আধুনিক ও স্মার্ট সিটির নতুন আইডিয়া। ইতোমধ্যে ১২২টি আইডিয়া জেলা প্রশাসনে জমা পড়েছে। সেখান থেকে ৫০টি চূড়ান্ত করা হয়েছে।প্রসঙ্গত, স্মার্ট সিটি বলতে বোঝায়, যেখানে উন্নত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ, বিভিন্ন তথ্য প্রদর্শনপূর্বক নাগরিকদের সুবিধা প্রদান। স্মার্ট সিটির মূল লক্ষ্য হলো স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করা।