শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

অচল সরঞ্জাম দিয়েই চলছে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যসেবা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

অচল সরঞ্জাম দিয়েই চলছে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যসেবা

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের এমআরআই মেশিনটি নষ্ট প্রায় চার বছর। একইভাবে সিটিস্ক্যান মেশিনটিও নষ্ট দীর্ঘদিন ধরে। অথচ চমেক হাসপাতাল বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রায় ৪ কোটি মানুষের নির্ভরযোগ্য সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। অন্যদিকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের এমআরআই মেশিনটি নষ্ট প্রায় ছয় বছর। দুটি এক্স-রে মেশিনের মধ্যে একটি নষ্ট দীর্ঘদিন। এভাবে নষ্ট, অচল, মেয়াদোত্তীর্ণ সরঞ্জাম দিয়েই চলছে চট্টগ্রামের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা। ফলে বঞ্চিত হচ্ছে রোগী। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গরিব-অসহায়, খেটে খাওয়া মানুষকে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর জরুরি রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। অনেক সময় রোগ ডায়াগনসিস করার আগেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা।  চমেক হাসপাতালে শয্যা ২ হাজার ২০০। এটি চট্টগ্রাম বিভাগের মানুষের চিকিৎসাসেবায় বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান। এখানে চিকিৎসা নিতে আসা অধিকাংশই নিম্ন, স্বল্প ও মধ্যম আয়ের। প্রতিদিন অন্তর্বিভাগ-বহির্বিভাগ মিলে চিকিৎসা গ্রহণ করে ৮ হাজারের বেশি। পক্ষান্তরে ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন সেবা নেয় ৫০০ রোগী। জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটি, চট্টগ্রামের সদস্যসচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলায় জনসংখ্যা অনুপাতে স্বাস্থ্যসেবা বড়ই অপ্রতুল। নতুন মন্ত্রী একজন চিকিৎসক। আশা করি এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।’ চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, ‘হাসপাতালে জনবল সংকট আছে। বিশেষ করে তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণি ও স্বাস্থ্য সহকারীর সংকট বেশি। আছে নষ্ট মেশিন। এ বিষয়ে আমরা মন্ত্রীকে জানিয়েছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন পর্যায়ক্রমে এসব বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার। তবে আমরা চেষ্টা করছি বিদ্যমান জনবল দিয়েই রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে।’ চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘হাসপাতালের এমআরআই মেশিনটি দীর্ঘদিন ধরেই পড়ে আছে। এটি মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। আর চক্ষু বিভাগে পড়ে থাকা মেশিনটি দক্ষ অপারেটরের অভাবে চালু করা যাচ্ছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলেছি।’ চমেক হাসপাতাল : চমেক হাসপাতালে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে দুটি এমআরআই মেশিন। ২০১৭ সালের ১৬ আগস্ট ৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকায় কেনা হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী ওয়ারেন্টি শেষ হয় ২০২০ সালের ১৫ আগস্ট। ২০২০ সালের শেষের দিকে একবার যন্ত্রটি বিকল হয়েছিল। পরে চালু করা গেলেও ২০২১ সালের মে মাসে একেবারে অকার্যকর হয়ে পড়ে।

সিটিস্ক্যান : হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে দুটি সিটিস্ক্যান মেশিন আছে। একটি সচল, অন্যটি ২০১৭ সাল থেকে অচল পড়ে আছে।

এনজিওগ্রাম : দুটি এনজিওগ্রাম মেশিন আছে। এর মধ্যে ২০১৪ সাল থেকেই একটি অচল।

ক্যাথল্যাব : ক্যাথল্যাব মেশিন দিয়ে এনজিওগ্রাম, রিং পরানো, পেসমেকার স্থাপনসহ বিভিন্ন চিকিৎসা দেওয়া হয়। কার্ডিওলজি বিভাগে দুটি ক্যাথল্যাব মেশিন আছে। এর মধ্যে একটি সচল, অন্যটি ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে অচল।

জেনারেল হাসপাতাল : জেনারেল হাসপাতালের এমআরআই মেশিনটি নষ্ট প্রায় ছয় বছর। সেখানে ২০১৫ সালে ৯ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় কেনা আরেকটি এমআরআই মেশিন বিকল হয়ে পড়ে আছে। তবে এটির দাম আরও কম দাবি করে দুদকে একটি মামলা হয়। এ ছাড়া পড়ে আছে চোখের রোগ নির্ণয়ের একটি মেশিন। দীর্ঘদিন ধরে অচল একটি এক্স-রে মেশিন। এটি জেলা সদর হাসপাতাল হলেও এখানে নেই ইটিটি, ইকোকার্ডিওগ্রাফিসহ প্রয়োজনীয় রোগ নির্ণয় ব্যবস্থা।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স : চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয়ও আছে অচল ও নষ্ট মেশিন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় রোগ নির্ণয় ব্যবস্থা না থাকায় রোগীদের প্রাথমিক অবস্থায়ও জেলা হাসপাতালে আসতে হয়।

পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি অ্যাম্বুলেন্স জঙ্গলের মধ্যেই পরিত্যক্ত পড়ে আছে। আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০১৮ সালে চীন থেকে আনা অত্যাধুনিক জেনারেটর অপারেটরটিও জ্বালানি সংকটের কারণে এখনো চালু করা যায়নি। এখানে বিদ্যুৎ না থাকলে দিনের বেলাও অন্ধকার হয়ে যায়। এ সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসায়ও বিভ্রাট ঘটে। দীর্ঘদিন ধরেই নষ্ট একমাত্র এক্স-রে মেশিনটি। বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যানেসথেসিয়া মেশিন, ডায়াথার্মি মেশিন, অটোক্লেভ মেশিন, সাইন মেশিন, সেন্ট্রিফিউজ মেশিন ও একটি ইসিজি মেশিন অচল পড়ে আছে। সীতাকুন্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নতুন একটি এক্স-রে মেশিন এলেও ইনস্টল করা হয়নি। জেনারেটর থাকলেও নষ্ট। ফলে অপারেশনের সময় বিদ্যুৎ চলে গেলে পড়তে হয় সমস্যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর