প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষাবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তাঁর মৃত্যুতে চট্টগ্রামসহ সারা দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বুধবার দিবাগত রাত পৌনে ২টায় ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় তাঁর লাশ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রাখা হবে। উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. চন্দন দাশ জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকালে প্রয়াত মাহবুবুল হকের লাশ চট্টগ্রামে আনা হবে। এর পর সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য লাশ সকাল ১০টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে নেওয়া হবে।
প্রয়াতের ছোটভাই নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম জানিয়েছেন, মাহবুবুল হক দীর্ঘসময় ধরে কিডনি রোগে ভুগছিলেন। গত মাসে তিনি স্ট্রোক করেন। এনজিওগ্রামের পর তার হার্টে ব্লক ধরা পড়ে। চিকিৎসকের পরামর্শে চলতি মাসে তার বাইপাস সার্জারি সম্পন্ন হয়। এর তিন দিন পর তিনি আবার ব্রেইন স্ট্রোক করেন।
আগে থেকেই তাঁর কিডনি ডায়ালাইসিস চলছিল। সাত-আট দিন আগে তাঁকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার রাত ১টা ৪৫ মিনিটে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে প্রয়াতের লাশ জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে নেওয়া হবে। জুমার নামাজের পর জানাজা শেষে সেখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানানো হবে। এর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।
ড. মাহবুবুল হকের জন্ম ১৯৪৮ সালের ৩ নভেম্বর ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায়। রেলওয়ে কর্মকর্তা বাবার চাকরি সূত্রে তারা সপরিবারে চট্টগ্রাম নগরীতে স্থায়ী বসতি গড়েন। নগরীর লালখান বাজারের বাঘঘোনা এলাকায় তাদের স্থায়ী নিবাস। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।
জানা গেছে, মাহবুবুল হক চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ১৯৬৯ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৭০ সালে একই বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যিালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৭ সালে পিএইচডি অর্জন করেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কর্মজীবনে প্রথমে তিনি বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতা করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ২০১৩ সালে তিনি অবসরে যান। শিক্ষকতার পাশাপাশি মাহবুবুল হক বাংলা ও নৃতাত্ত্বিক ভাষা নিয়ে গবেষণা করেন। প্রমিত বাংলা বানানের নিয়মরীতি প্রণয়নে ভূমিকা রেখে তিনি ভাষাবিজ্ঞানী হিসেবে খ্যাতি পান। বাংলাদেশ, ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে তার ৪০টির বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত থেকে শিক্ষানীতি ও পাঠ্যবই প্রণয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০১৯ সালে তিনি ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদক পান। এ ছাড়া তিনি বাংলা একাডেমিসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।