প্রধান বিচারপতির পদ ব্যবহার করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপ্রতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে করা মামলা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথির আদালতে এ মামলা করেন অ্যাডভোকেট ইমরুল হাসান। মামলায় গ্রহণযোগ্য উপাদান নেই উল্লেখ করে আদালত এটি খারিজ করে দেন।
মামলা খারিজের প্রতিক্রিয়ায় বাদী অ্যাডভোকেট ইমরুল হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মামলা খারিজ করাটা আইনানুগ হয়নি। আমরা এ আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে রিভিশন দায়ের করব। মামলার অভিযোগে বাদী উল্লেখ করেন, ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনের মাধ্যমেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে যোগ করা হয়েছিল। এর পর থেকে নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়ে পরবর্তী সরকার গঠিত হয়।
২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে এ সংশোধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ কয়েকজন রিট আবেদন করেন। ২০০৪ সালে হাই কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে বৈধ বলে রায় দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে রিট আবেদনকারী পক্ষই আপিল বিভাগে আপিল করেন। এ সময় এম সলিম উল্লাহ অসুস্থতার কারণে মারা যাওয়ায় আবদুল মান্নান খান নামে আরেকজন আইনজীবী রিট আবেদনটি এগিয়ে নিয়ে যান। দীর্ঘ সময় পরে ২০১০ সালের ১ মার্চ আপিল বিভাগে এর শুনানি শুরু হয়। আপিল বিভাগ আবেদনকারী এবং রাষ্ট্রপক্ষ ছাড়াও শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি (আইনজ্ঞ) হিসেবে শীর্ষস্থানীয় আটজন আইনজীবী বক্তব্য শোনেন। অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে সিনিয়র আইনজীবী টি এইচ খান, ড. কামাল হোসেন, আমীর-উল ইসলাম, মাহমুদুল ইসলাম ও রোকনউদ্দিন মাহমুদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন।
মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, অ্যামিকাস কিউরিদের বক্তব্য আমলে না নিয়ে বিচারপতি খায়রুল হক তড়িঘড়ি করে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির মতামতের ভিত্তিতে রায়ের জন্য দিন নির্ধারণ করেন। ছয় বিচারপতির মধ্যে তিন বিচারপতি অ্যামিকাস কিউরিদের সঙ্গে একমত হন এবং ত্রয়োদশ সংশোধন কোনো সংকট তৈরি করেনি বলে মত দেন। কিন্তু অন্য তিন বিচারপতি ভিন্নমত তুলে ধরলে মামলার ফল টাই হয়। তাই প্রধান বিচারপতি হিসেবে এ বি এম খায়রুল হকের হাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ছিল এবং তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করেন। কিন্তু রায়ের ব্যাপারে জনমনে অসন্তুষ্টি দেখা দেওয়ায় তিনি আর স্বাক্ষর প্রদান করেননি এবং নথি নিজ জিম্মায় বাসায় নিয়ে রাখেন যা বেআইনি।
উল্লেখ্য, মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তি খায়রুল হক বাংলাদেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১০ সালের ১ অক্টোবর নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তিনি ২০১১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।