চট্টগ্রামের পারকি সমুদ্রসৈকতকে পর্যটনবান্ধব পর্যটন কমপ্লেক্স করার উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১৯ সালে। ১৩ দশমিক ৩৩ একর জায়গায় শুরু হয় ৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পর্যটন কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মেয়াদের দুই বছর পার হয়ে গেলেও এখনো শেষ হয়নি নির্মাণকাজ। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির মেয়াদ আগামী ২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর আবেদন করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তবুও আশঙ্কা রয়ে যায়, কবে নাগাদ শেষ হবে পর্যটন কমপ্লেক্সের কাজ।
জানা যায়, এ প্রকল্পের আওতাধীন মোট ১৭টি স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। ১৪টি আধুনিক কটেজ রয়েছে। এর মধ্যে চারটি ডাবল ডুপ্লেক্স কটেজ ও ১০টি সিঙ্গেল কটেজ। চতুর্থ তলাবিশিষ্ট একটি মাল্টিপারপাস ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোরে থাকবে পর্যটন অফিস, দ্বিতীয় তলায় দুটি দোকান, একটি রেস্টুরেন্ট, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় থাকবে দুটি বার, একটি ২৫০ আসনের কনভেনশন হল। তৃতীয় তলা বিশিষ্ট একটি সার্ভিস ব্লক, যেখানে ছাত্রছাত্রীদের থাকার বিশেষ ব্যবস্থাসহ পর্যটকদের জন্য সিঙ্গেল ব্যাচেলর সার্ভিস রুম ৩৫টি, কমপ্লেক্স সার্ভিস স্টাফদের জন্য ৪৪টি রুম রয়েছে। এ ছাড়া একটি লেক, দুটি পিকনিক শেড, কুকিং শেড রয়েছে। একটি খেলার মাঠ, যার মধ্যে সব ধরনের খেলার ব্যবস্থা থাকবে।
পারকি পর্যটন কমপ্লেক্সের প্রকল্প পরিচালক গোলাম মাহমুদ কবির বলেন, এ প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য আমরা প্রস্তাবনা দিয়েছি। কারণ স্থানীয়গত দিক থেকে এখানে সারা বছর কাজ করা সম্ভব হয় না। যার কারণে মেয়াদের দুই বছর শেষ হলেও পরিপূর্ণ কাজ শেষ হয়নি। এ ছাড়া স্থানীয় ও কাজের জটিলতাও কিছু ছিল। ইতোমধ্যে পর্যটন কমপ্লেক্সের ৭২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখন ফিনিশিংয়ের কাজ অবশিষ্ট রয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পরিপূর্ণ কাজ শেষ হবে বলে আমরা আশাবাদী।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পের কাজগুলোকে তিন ভাগে বাস্তবায়ন করছে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে সীমানাপ্রাচীর ও গেট পোস্টের কাজ করছে রাজ করপোরেশন। বালু ভরাট, হ্রদ, ভিতরের রাস্তা ও নালার কাজ নিয়াজ ট্রেডার্স এবং অবকাঠামোগত অন্যান্য কাজ করছে দেশলিংক লিমিটেড। তার মধ্যে দেশলিংক লিমিটেডের দীর্ঘসূত্রতার কারণে প্রকল্পটি সময়মতো শেষ করতে পারেনি। প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটক পার হয়ে ভিতরে কাজ করছেন শ্রমিকরা। কটেজগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হলেও পলেস্তরা ও আস্তরণের কাজ শেষ হয়নি। বিদ্যুৎ লাইন টানা হলেও সংযোগ দেওয়া হয়নি। একটি মাল্টিপারপাস ভবনসহ দুটি ভবনের কাজ শেষ হয়নি।
স্থানীয় শাহেদুল ইসলাম জানান, পারকি সৈকতকে ঘিরে হাতে নেওয়া উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এখানকার দৃশ্য বদলে যেত এবং এলাকাটি সমৃদ্ধ হতো। এর ফলে সৈকতে দেশি-বিদেশি পর্যটক বেড়াতে আসতেন এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসত এলাকায়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘসূত্রতার কারণে পুরো প্রকল্পটি থমকে আছে।
গত ৩০ নভেম্বর পারকি সৈকত পর্যটন কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সদ্যপ্রয়াত এ এফ হাসান আরিফ এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। এত সময় পেয়েও প্রকল্পের কাজ শেষ করতে না পারায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন পর্যটন উপদেষ্টা।