পায়ে ভর দিয়ে চলার শক্তি নেই। এক হাত তেমন কাজে আসে না। মুখে কথা জড়িয়ে যায়। শারীরিক এমন নানা প্রতিবন্ধকতা ছাপিয়ে স্বপ্ন জয়ে অদম্য এক শিক্ষার্থী রিফাত। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র। স্বপ্নবাজ এ শিক্ষার্থী কর্মজীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষায় কাজ করতে চান। চুয়াডাঙ্গার সদরে বেড়ে ওঠা রিফাতের শিক্ষাজীবন পুষ্পসজ্জিত ছিল না। শৈশবে তার বয়সি অন্যরা যখন স্কুলে যেত তখন তারও স্কুলে যাওয়ার ইচ্ছা জাগে। তবে শারীরিক সমস্যা থাকায় কোনো স্কুল তাকে ভর্তি নিতে চায়নি। তখন তাকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা হয়। পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়ে সবাইকে চমকে দেন রিফাত। এ শিক্ষার্থী জানান, কোনো স্কুল যখন ভর্তি নিচ্ছিল না তখন মন খুব খারাপ হয়েছিল। মা-বাবা নিজেই আমার পড়ানোর দায়িত্ব নেন এবং একটি প্রাইভেট স্কুলে ভর্তি করে দেন। পঞ্চম শ্রেণিতে যখন বৃত্তি পেলাম, তখন সবার ধারণা বদলে গেল।
রিফাত নীলমনিগঞ্জ মাধ্যমিক উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৪.৬১ পেয়ে পাস করেন। মেধা তালিকায় ভর্তি হন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে। সেখান থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। এরপর বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু। একটি স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে নিজের জীবন গড়তে হবে। সেই লক্ষ্যে দিনরাত পড়াশোনা করতেন রিফাত। পড়তে পড়তে এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তবু দমিয়ে যাননি। অবশেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এ’ ইউনিটে পরীক্ষা দিয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন রিফাত। ভর্তি হলেও তার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া চ্যালেঞ্জিং ছিল।
স্বপ্নবাজ এ শিক্ষার্থী জানান, এত দিন বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করেছি। পরিবারের সবাই পাশে ছিল। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে বাইরে যাওয়ার পর আমার দেখাশোনা কে করবে। এমন অনেক বোঝাপড়া চলতে থাকে। তবে আমার একান্ত ইচ্ছা ও পরিবারের সমর্থনে মা-সহ রাজশাহীতে আসি। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সহপাঠী ও বন্ধুবান্ধব সবাই আমাকে নানাভাবে সহায়তা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুতে যখন অত্যাধুনিক হুইল-চেয়ার ছিল না, তখন সহপাঠীরা আমাকে কোলে তুলে দ্বিতীয় তলা ও তৃতীয় তলার ক্লাসে নিয়ে যেত। তাদের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ।
২০১৯ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় রিফাতের বাবা সাইদুর রহমান মারা যান। বড় ভাই ও মাকে নিয়ে তার পরিবার। বড় ভাই ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পড়াশোনার কারণে মাকে নিয়ে রাজশাহীতে থাকেন রিফাত। অদম্য এই শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করেন।
রিফাত জানান, তার এ পর্যায়ে আসার পেছনে বিভিন্ন স্তরের মানুষের অবদান আছে। পড়াশোনা শেষ করে মানুষের পাশে থাকতে চান। এ ছাড়া শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশুদের সুরক্ষায় একটি ফাউন্ডেশন গড়তে চান। যেখানে প্রতিবন্ধী শিশুদের দক্ষতা অনুসারে গড়ে তোলা হবে এবং তারা জনসম্পদে পরিণত হবে। যথাযথ সুযোগ-সুবিধা পেলে সবাই দেশে অবদান রাখতে পারে। শারীরিক অক্ষমতা যেন কারও স্বপ্নকে দমিয়ে দিতে না পারে সেই স্বপ্ন দেখেন তিনি।