জার্মানিতে করোনা (কোভিড-১৯) সংক্রমণের হার আবার কমতে থাকায় পরিস্থিতির উন্নতির আশা বাড়ছে। গ্রীষ্মের ছুটির আগেই শিশুদের করোনা টিকা দেওয়ার আশা করছেন দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী। খবর ডয়চে ভেলের।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় কড়া পদক্ষেপে যে সত্যি কাজ হয়, জার্মানিতে তা আবার স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রাতে কারফিউসহ মানুষের মেলামেশা কমাতে একাধিক পদক্ষেপের ফলে দৈনিক সংক্রমণের হার ধীরে হলেও ধারাবাহিকভাবে কমে চলেছে। প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে সংক্রমণের গড় সাপ্তাহিক হার কমে দাঁড়িয়েছে ১৫৫, যা গত দুই সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে কম। তবে ‘তৃতীয় ঢেউ’ এখনো পুরোপুরি ভাঙা যায়নি বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সংক্রমণের হার আরও দ্রুত কমলে তবেই আশার আলো দেখা যাবে। সেইসঙ্গে হাসপাতালের আইসিইউ-র ওপর চাপ কমাও জরুরি।
এমন ইতিবাচক প্রবণতার জন্য টিকাদান কর্মসূচির দ্রুত গতিও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তবে এখনো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের সিংহভাগ টিকা পাননি বলে সতর্কতা বজায় রাখার পক্ষে যুক্তি দেখাচ্ছেন তারা। কিছু বিশেষজ্ঞ অবশ্য হিসাব করে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণের হার নাটকীয় হারে কমে যাবে বলে পূর্বাভাষ দিয়েছেন।
করোনাভাইরাসের আরও ছোঁয়াচে সংস্করণ, বিশেষ করে ব্রিটেন থেকে আসা বিওয়ানওয়ানসেভেন শিশু ও কিশোরদের মধ্যে মারাত্মক হারে সংক্রমণ ঘটিয়ে চলেছে বলেও সরকারের উদ্বেগ কাটছে না। শিশু ও কিশোররা সব ক্ষেত্রে নিজেরা আক্রান্ত না হলেও তাদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা বাড়ছে। ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র পেলে জার্মানিতে গ্রীষ্মকালীন ছুটির আগেই ১২ বছরের কম বয়সীদের করোনা টিকা দেওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্পান।
চলতি বছর গ্রীষ্মে ইউরোপে জনজীবন অন্তত কিছুটা হলেও স্বাভাবিক করে তুলতে অভিন্ন টিকা সার্টিফিকেট চালু করার ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সেই প্রস্তাব অনুমোদন করে। বিশেষ করে ইউরোপের দক্ষিণের দেশগুলো পর্যটন শিল্পকে চাঙ্গা করতে এমন ইইউ ভ্যাকসিন সার্টিফিকেটের দাবি জানিয়ে আসছিল। তবে বিভিন্ন দেশে টিকা ও করোনা পরীক্ষার নিয়ম আলাদা হওয়ায় এমন অভিন্ন সার্টিফিকেটের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া পিসিআর টেস্টের স্কীকৃতি, তথ্য সংরক্ষণ, বৈষম্য ইত্যাদি অনেক বিষয়েও ইইউ দেশগুলোর মধ্যে সমন্বয় এখনো বেশ কঠিন হয়ে রয়েছে। কোনো কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারও তৈরি করা সম্ভব হয়নি।
এমন অবস্থায় ইউরোপীয় পর্যায়ে করোনার টিকা সংক্রান্ত ডিজিটাল সার্টিফিকেট প্রস্তুত হলেও সেই সার্টিফিকেট দেখিয়ে সব দেশে একই সুযোগসুবিধা ভোগ করা সম্ভব হবে না। কোনো দেশে প্রবেশ করার আগে সেখানকার বিধিনিয়ম জেনে নিতে হবে। তাছাড়া ইইউ সার্টিফিকেটে শুধু অনুমোদিত টিকাগুলো নথিভুক্ত করা যাবে। যেসব দেশ বিচ্ছিন্নভাবে রুশ বা চীনা টিকা অনুমোদন করেছে, সেসব দেশকে এ বিষয়ে নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এদিকে জার্মানিসহ একাধিক ইইউ দেশ নিজস্ব ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে কার্যক্ষেত্রে স্বীকৃতি, বিধিনিয়ম ইত্যাদি নানা বিষয়ে বিভ্রান্তির আশঙ্কা রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ