আগামী (২০২৫-২৬) অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির আকার ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। উন্নয়ন বাজেটে বরাবরের মতো এবারও বড় পাঁচটি খাতেই ৭০ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো- পরিবহন ও যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, শিক্ষা, গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাবলি এবং স্বাস্থ্য। যার মধ্যে শুধু পরিবহন ও যোগাযোগ খাতই ২৫ শতাংশ বরাদ্দ পেয়েছে। এতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে পরিবহন ও বিদ্যুৎ খাতে। এ দুই খাতে বরাদ্দ থাকছে ৯১ হাজার কোটি টাকারও বেশি। তবে আগামী অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ কমছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এতে পাঁচ খাতেই বরাদ্দ কমছে ৮ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত। তবে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ কমছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে।
গতকাল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে¡ রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার ব্যয়সংবলিত এ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অনুমোদন দেওয়া হয়।
সভা শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আসছে বাজেটে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হবে। পাশাপাশি অবসর-কল্যাণ ভাতা ৫ থেকে ৬ বছরের বকেয়া আছে, এগুলো মেটানো হবে। সেজন্য আসছে বাজেটে পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের জন্য বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, অনেক বড় বড় হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে, বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়েছে, কিন্তু হাসপাতালে যেমন ডাক্তার নেই, তেমনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নেই। এসব কারণে এ দুই খাতে পরিচালন ব্যয় বাড়ানো হবে। তিনি জানান, আসন্ন অর্থবছরে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ খাতে মোট ৫৮ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩২ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। ফলে নতুন এডিপিতে উন্নয়ন বরাদ্দের দিক দিয়ে সবচেয়ে অগ্রাধিকার পেয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। এরপর রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি। বিগত বছরগুলোতেও এ দুই খাতকেই অগ্রাধিকার পেতে দেখা গেছে। এবার শিক্ষা খাতের অবস্থান তিন নম্বরে। চার নম্বরে আছে গৃহায়ণ। স্বাস্থ্য খাতের অবস্থান পঞ্চম।
জানা গেছে, শিক্ষা খাতে ৯১ প্রকল্পে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা, যা চলতি এডিপির বরাদ্দ থেকে ২ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা কম। শতকরা হারে এ খাতে এডিপির বরাদ্দ কমেছে প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ। স্বাস্থ্য খাতের ৩৫ প্রকল্পে আগামী অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ থাকছে ১৮ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। চলতি এডিপিতে এ খাতে বরাদ্দ ২০ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। বরাদ্দ কমেছে সোয়া ১২ শতাংশ। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের প্রকল্পগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই স্কুল-কলেজ, হাসপাতালের ভবনসহ অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুসারে, আগামী এডিপির অর্থের মধ্যে স্থানীয় উৎস থেকে জোগান দেওয়া হবে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া প্রকল্প সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে ৮৬ হাজার কোটি টাকা। মোট প্রকল্প সংখ্যা ১ হাজার ১৪২টি। এডিপিতে তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে শিক্ষা খাতে। এ খাতে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ ২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা। গৃহায়ণ খাতে ২২ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা, স্বাস্থ্যে ১৮ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা, স্থানীয় সরকার ও পল্লি উন্নয়নে ১৬ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কৃষিতে ১০ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ খাতে ১০ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় ৫ হাজার ৩৮ কোটি টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে ৩ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে।
এবারের বাজেট দায়িত্বজ্ঞানহীন নয় : পরিকল্পনা উপদেষ্টা
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভা শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের যে বাজেট আসছে, এটা শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের বাজেট। টাকার অঙ্কে বাজেট ছোট হলেও বাস্তবসম্মত ও বাস্তবায়নযোগ্য হবে। বাজেটের নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা ফেরানো হবে। এবার দায়িত্বজ্ঞানহীন বাজেট হচ্ছে না। বাজেট ব্যবস্থাপনা টেকসই করা হলো আমাদের মূল লক্ষ্য। এই বাজেটে আমাদের রাজস্ব বৃদ্ধির চেষ্টা থাকবে। একই সঙ্গে জিডিপি ৪ শতাংশের নিচে রাখার চেষ্টাও আমরা করছি। এবারের বাজেট দায়িত্বজ্ঞানহীন বাজেট নয়। তিনি বলেন, আমরা টাকা ছাপিয়ে বাজেট বাস্তবায়ন করব না। কারণ সঙ্গে সঙ্গে এর প্রভাব না পড়লেও কিছুদিন পরে তা মূল্যস্ফীতির ওপর কিছু প্রভাব পড়ে। বেতন বৃদ্ধি করলেও মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব পড়ে। তিনি আরও বলেন, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ে এমন প্রকল্প নেওয়া হবে না। তবে দীর্ঘমেয়াদি ঋণে মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎপ্রকল্প হচ্ছে। এ প্রকল্পে জাপান স্বল্প সুদে ঋণ দিচ্ছে। বাজেট ব্যবস্থাপনা টেকসই করা হবে। ছোট হলেও বাস্তবসম্মত বাজেট হবে।