নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে গত এক মাসে তিনটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বা সংঘাতের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রায় প্রতিটি হত্যাকান্ডই সংঘটিত হয়েছে পরিবারের সদস্য বা আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে। এসব হত্যাকান্ডের পেছনে কারণ হিসেবে রয়েছে পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন, মায়ের হাতে ছেলে খুন, মুক্তিপণ দাবির আশায় অপহরণের পর হত্যা। গত ৫ মে ভোরে সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি তালতলা মাদবর বাজারসংলগ্ন বিল থেকে অর্ধগলিত অবস্থায় রিয়াদ (৭) নামের শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে গত ২৪ এপ্রিল বিকাল থেকে শিশু রিয়াদ নিখোঁজ ছিল। ২৮ এপ্রিল একটি মোবাইল নম্বর থেকে রিয়াদের বাবার কাছে ফোনে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে এবং রিয়াদের বাবার সন্দেহের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযুক্ত সুজনকে (২৮) আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পুলিশ জানায়, মুক্তিপণের টাকা না পাওয়ায় চাচাতো বোনের ছেলেকে খুন করে আসামি সুজন। এ খুনের ঘটনার ২১ দিন পর চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। গত ১৪ মে ঈদের দিন সকালে সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় নিমাইকাশারী এলাকা থেকে বিবি ফাতেমা (৪৫) নামের এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতের গলায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী নুরুল আলম সবুজকে নোয়াখালীর শ্রীপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ হত্যাকান্ডে  ব্যবহৃত ছুরিটিও উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নুরুল আমীন জানায়, তার স্ত্রী পরকীয়া করত- এমন সন্দেহ থেকে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়।

 এর ধারাবাহিকতায় হত্যাকাে র তিন দিন আগে সে তার স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরে আবারও ঝগড়া হওয়ায় স্ত্রী ঘুমিয়ে পড়লে তাকে ধারালো ছুরি দিয়ে হত্যা করে সে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছেন। এ খুনের মামলার তদন্ত সম্পন্ন করে ঘটনার চার দিন পর আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।

এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মশিউর রহমান জানান, পারিবারিক ও সামাজিক অস্থিরতার কারণে এসব হত্যাকা  বেড়েছে। সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে ক্রমান্বয়ে সরে পড়া এবং সর্বস্তরে নীতি-নৈতিকতার চরম অবক্ষয়। এ ছাড়া একাকিত্ব এবং প্রযুক্তির অপব্যবহারের কারণেও এসব ঘটনা আমাদের সমাজে অহরহ ঘটছে। শুধু আইন দিয়ে নয়, আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধকে আরও শক্তিশালী করতে হবে এবং এর চর্চা করতে হবে।