রবিবার, ১৭ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

বৃষ্টি নেই, সেচের পানিতে চলছে আমন আবাদ

বাড়ছে খরচ, বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা নিয়ে চিন্তিত কৃষক

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

বৃষ্টি নেই, সেচের পানিতে চলছে আমন আবাদ

সেচ দিয়ে আমন আবাদের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে জমি। কুড়িগ্রামের মাঠের ছবি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বরেন্দ্র অঞ্চল চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে আষাঢ়ে নেই বৃষ্টির দেখা। এ অবস্থায় বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপের পানি দিয়েই রোপা আমন আবাদ শুরু করেছেন কৃষকরা। এতে আমন আবাদের খরচ বেড়ে গেছে। অনাবৃষ্টির কারণে শুকনো জমিতে গভীর নলকূপের পানি সেচ লাগছে দ্বিগুণ। এ ছাড়া গত বছর শ্রমিকের মজুরি ছিল ৩০০ টাকা, এ বছর ধান লাগানো শ্রমিকের মজুরি বেড়ে হয়েছে ৫০০। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহম্মেদ বলেন, চলতি রোপা আমন মৌসুমে নাচোলে ২ হাজার প্রান্তিক কৃষকের মধ্যে উচ্চ ফলনশীল ব্রি-৭৫, ৮০, ৮৭ ও বীনা-১৭ জাতের ধানবীজ ও রাসায়নিক সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এবার প্রায় ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ধানের বাজারমূল্য ভালো থাকায় প্রায় ৫ হাজার হেক্টর আমবাগানেও ধান আবাদ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এদিকে বর্ষাকালে কৃষকের আবাদ খরচ কম হওয়ার কথা থাকলেও পুরো আষাঢ় মাসে অনাবৃষ্টির কারণে খরচ বেশি হবে বলে মনে করছেন কৃষকরা। অন্যদিকে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভীর নলকূপ অপারেটররা বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলার জন্য উঁচু জমি বাদ দিয়ে নিচু জমিতে আমন আবাদের জন্য কৃষকদের সঙ্গে প্রতিদিন বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়ছেন। গভীর নলকূপ সূর্যপুর-১ এর অপারেটর গুমানীর বলেন, বিদ্যুৎ সংকট চলমান থাকলে আমন আবাদ সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই সেচ ক্যাপাসিটি কমিয়ে আবাদ করার চেষ্টা করছেন তিনি। কিন্তু তার নলকূপের সেচ এলাকার কৃষকরা কথা শুনছেন না। এদিকে পরপর দুই দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কুড়িগ্রামের কৃষক। বন্যায় আমন বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়েছে। পানি নেমে গেলেও কৃষকদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। জেলাজুড়ে চলছে খরা। ১৫-২০ দিন ধরে এ অঞ্চলে নেই বৃষ্টি। খাল-বিল ডোবা-নালা দিঘি শুকিয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে পানির তীব্র সংকট। বাধ্য হয়ে ৯ উপজেলার অধিকাংশ কৃষক জমিতে সেচ ও শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তুলে আমন চারা লাগাতে শুরু করেছেন। বৃষ্টি না হলে কিভাবে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে আমন চাষে লাভবান হবেন এ নিয়ে চিন্তিত তারা। এছাড়া প্রচ- গরমে জনজীবনও অতিষ্ঠ। প্রতিদিন কুড়িগ্রামে তাপমাত্রা ৩০-৩৫ ডিগ্রিতে ওঠানামা করছে। সামনে তাপমাত্রা আরও বাড়ার আবাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জীব-বৈচিত্র্যের উপর। ফুলবাড়ী উপজেলার কিশামত শিমুলবাড়ীর কৃষক খলিলুর রহমান জানান, ১৮-২০ দিন ধরে আমাদের এখানে বৃষ্টি নেই। প্রখর রোদে জমি শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। আমনের বীজতলাও বড় হয়ে গেছে। বৃষ্টির অপেক্ষায় না থেকে সেচ দিয়ে রোপণ শুরু করেছি। একই উপজেলার তোফাজ্জল হোসেন বাচ্চু জানান, মাঝেমধ্যে আকাশে কাল মেঘ দেখা গেলেও বৃষ্টির নাম-গন্ধ নেই। তিনি বলেন, বৃষ্টি না হলে এবারে আমন চাষে উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ পড়বে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবদুর রশীদ বলেন, চলতি আমন মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে আমন রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃষ্টি না থাকায় সেচ ও শ্যালো মেশিন দিয়ে চাষিরা আমন লাগাতে শুরু করেছেন।

সর্বশেষ খবর