মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

চার খাল পুনঃখনন না করায় বিপাকে কৃষক

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

চার খাল পুনঃখনন না করায় বিপাকে কৃষক

নওগাঁর ধামইরহাটে চারটি খাল পুনঃখনন না করায় হাজারো কৃষক বেকায়দায় পড়েছেন। খালগুলো আংশিক খনন করা হলেও বাকি অংশ খনন না করায় কৃষকরা কাক্সিক্ষত সুবিধা ভোগ করতে পাড়ছেন না। বর্ষার আগে চারটি খালের অখননকৃত অংশ খননের জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকার শত শত কৃষক। জানা গেছে, উপজেলার চারটি খালকে পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের আওতায় এবং এলজিইডির মাধ্যমে টেকসহ ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় খাল পুনঃখনন করা হয়। খালগুলো হলো টুটিকাটা খাল, মঙ্গল খাল, ঘুকসি খাল এবং লোদিপুর-ধনঞ্জয়নগর খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড। খালের দুই পাড়ের শত শত কৃষক এসব সমবায় সমিতির সদস্য। খালগুলো ১৫-২০ বছর আগে খনন করা হয়। খননের কয়েক বছরের মধ্যে খালে পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে খালে পানি সংরক্ষণ করে রবি মৌসুমে সেই পানি ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে খালের দুই পাড়ের কৃষকরা কাক্সিক্ষত সুবিধা ভোগ করতে পারছেন না। ধামইরহাট মূলত বরেন্দ্র অঞ্চল। বরেন্দ্র অঞ্চলে খাল বিলের সংখ্যা কম। তার উপরোন্ত দীর্ঘদিন এসব খালে পলিজমে ভরাট হওয়ার কারণে কৃষকদের ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এসব খাল পুনঃখনন করলে সারা বছর খালে পানি সংরক্ষিত থাকত। ফলে কৃষকরা সুবিধা মতো ফসলে সেচ দিতে পারতেন। এ ছাড়া এসব খালে মাছ চাষ ও হাঁস পালন করা সম্ভব। চারটি খালের সমিতির মোট সদস্য সংখ্যা এক হাজার ৫৭৬ জন। মঙ্গলখাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সম্পাদক নুরুজ্জামান হোসেন বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মঙ্গল খালের পৌনে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ১ কেটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হয়। খালের বাকি অংশ খনন না করায় কৃষকরা কাক্সিক্ষত সুবিধা ভোগ করতে পারছেন না। টুটিকাটা খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মোতারফ হোসেন বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে টুটিকাটা খালের মোট সাড়ে ১২ কিলোমিটারের মধ্যে ৩ হাজার ১০০ মিটার খালটি পুনঃখনন করা হয়। পুনঃখননকৃত অংশের কৃষকরা সুফল পেতে শুরু করেছে। কিন্তু খালের বাকি অংশ খনন না করায় ওই এলাকায় কৃষকরা পানির অভাবে চাষাবাদে ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। লোদিপুর-ধনঞ্জয়নগর খাল সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ জানান, ২০২১-২২ অর্থবছরের লোদিপুর-ধনঞ্জয়নগর খালের মোট ১৩ কিলোমিটারের মধ্যে চার কিলোমিটার ২০০ মিটার খাল পুনঃখনন করা হয়। ঘুকসি খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল হাকিম জানান, খালের বাকি অংশ খনন না করায় বর্ষা মৌসুমে পানি সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না। ফলে কৃষকরা শুষ্ক মৌসুমে সংরক্ষিত পানি ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। টুটিকাটা খালের পশ্চিম পাড়ের শালুককুড়ি গ্রামের সুবিধাভোগী আমেনা বেগম বলেন, দীর্ঘদিনে খালে পলি জমায় ভরাট হয়ে গেছে। এতে খাল থেকে পানি উপচে ফসল ডুবে যায়। এ ছাড়া বন্যায় বাড়িঘরও তলিয়ে যায়। খাল পুনঃখনন করায় এ সমস্যা আর থাকবে না। শুষ্ক মৌসুমে খালের পানি সংরক্ষণ করে এ পানিতে তিনি হাঁস পালন করেছিলেন। কিন্ত দির্ঘদিন খাল পুনঃখনন না করায় পানির অভাবে তার হাঁস পালন বন্ধ হয়ে গেছে। মঙ্গল খালের আওতাধীন উত্তর চকযদু গ্রামের কৃষক রমজান আলী বলেন, খালের পানি ব্যবহার করে বোরো ধানের চারা রোপণ করা হয়েছিল। তাছাড়া এ পানি ব্যবহার করে রবি মৌসুমে আলো, গম, সরিষা, পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি উৎপাদন করা হতো। স্লুইস গেট বন্ধ করে বর্ষা মৌসুমে পানি সঞ্চয় করে রাখার ফলে ১২ মাস খালে পানি থাকত। কিন্তু খালের কিছু অংশ পলিজমে ভরাট হওয়ায় কৃষকরা আর আগের মতো এ খাল ব্যবহার করতে পারছেন না। এলজিইডির নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ বলেন, খাল খননের ফলে ওই এলাকার কৃষির প্রসার ঘটেছে।

মৎস্য চাষ ও হাঁস পালনসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিতভাবে বৃদ্ধি প্রধান লক্ষ্য। এতে সমিতির সদস্যের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। এ উদ্দেশ্যে খালগুলো খনন করা হয়েছিল। পলিজমার কারণে অনেক খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আমাদের পক্ষ থেকে অনেক খাল পুনঃখনন করা হয়েছে। যেসব খাল ভরাট হয়ে গেছে সেই খালগুলো পুনঃখননের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এসব খালের নামে কৃষকদের নিয়ে একটি সমিতি গঠনও রয়েছে। যে সমিতির কার্যক্রম ভালো সেই খাল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পুনঃখনন করা হবে। একবারে হয়তো চারটি খাল পুনঃখনন করা যাবে না। পর্যায়ক্রমে গ্রেডিং পয়েন্ট অনুসারে খনন করা হবে।

সর্বশেষ খবর