কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার জিলাপীতলা বাজার থেকে গড়াই নদীর বালুরঘাটের দূরত্ব মাত্র ৭০০ মিটার। এতটুকু গ্রামীণ সড়কের কাছে যেন অসহায় হয়ে পড়েছে আশপাশের কয়েক গ্রামের ১০ হাজার মানুষ। সড়কের কার্পেটিং উঠে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ। শুষ্ক মৌসুমে প্রচুর ধুলাবালি আর বর্ষায় জমে থাকে কাদাপানি। চলাচলে সারা বছরই চরম ভোগান্তির শিকার হন স্থানীয় বাসিন্দারা। সড়কটি পাকা করা হয়েছিল ২০০৬ সালে। প্রতি বছর সড়কের শেষ মাথায় প্রায় ২ কোটি টাকার বালুরঘাট ইজারা দেয় প্রশাসন। প্রতিদিন ২০০-৩০০ বালুভর্তি ৬ ও ১০ চাকার ট্রাক চলে এই সড়কে।
কুমারখালীর সদকী ইউনিয়নের উত্তর মূলগ্রামের কৃষক সাদেক আলী বলেন, ‘এই রাস্তায় ১০ চাহার (চাকা) গাড়ি চলে। রাস্তাঘাট ভাঙা। এ দেশে (এলাকায়) কেউ বিয়ে করতিও চাই না, দিতিও চাই না। আসা-যাওয়া খুব কষ্ট। ১৫ বছর ধরে মানুষ খুব দুর্ভোগে পড়ে রইছে। বৃষ্টির কাদার ছয় মাস বাড়িতে বের হবার পার না।’ একই ইউনিয়নের হিজলাকর গ্রামের গৃহবধূ শিলা খাতুন বলেন, দেড় মাস আগে সড়কের বেহাল কারণে তার ননদের বিয়ে ভেঙেছে। সড়কটি সংস্কারের দাবি জানিয়ে সম্প্রতি মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী। পরে সড়কে বিক্ষোভ করে ধান চারা রোপণ করে প্রতিবাদও জানান।
সদকী ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য আবদুল হামিদ বলেন, বালুর গাড়ি চলার কারণে কার্পেটিং উঠে রাস্তার এই বেহাল হয়েছে। সরকার প্রতি বছর ২ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব নিয়ে যায় বালুরঘাট থেকে। কিন্তু রাস্তার কোনো কাজ করে না। হিজলাকর উত্তর মূলগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা বেহাল। প্রায়ই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পোশাক নষ্ট হয়ে যায়। বর্ষা মৌসুমে শিশুরা বিদ্যালয়ে কম আসে। রাস্তাটি মেরামত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলী নাজমুল হক জানান, গ্রামীণ সড়কে ভারী যানবাহন চলা নিষিদ্ধ। বালুর গাড়ির কারণে সড়কটির এ দুরবস্থা। এখানে সিসি ঢালাই ছাড়া কার্পেটিং করে লাভ হবে না। বরাদ্দ পেলে প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। ইউএনও এস এম মিকাইল ইসলাম খানাখন্দ বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। সরেজমিন দেখা যায়, সড়কের কার্পেটিং উঠে গেছে অনেক আগে। ভারী যানবাহন চলায় দুই পাশে ক্যানালের মতো হয়েছে। তাতে জমে আছে কাদাপানি।
কৃষক নাজমুল হোসেন বলেন, দিনরাত শত শত বালুর গাড়ি চলে। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি কাঁচা নাকি পাকা সড়ক। কাদাপানির কারণে এ সড়ক দিয়ে অটোভ্যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ অন্য কোনো গাড়ি আসতে চায় না। মাথায় করে কৃষিপণ্য আনা-নেওয়া করা লাগে। এতে খরচ ও ভোগান্তি দুটিই বেশি হয়। তিনি দ্রুত সড়ক সংস্কারের দাবি জানান।