নেত্রকোনার কলমাকান্দায় গত নভেম্বর থেকে শুক্রবার পর্যন্ত অজ্ঞাত এক রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশুসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত রয়েছে আরো প্রায় ১৫ জন। ফলে গ্রামে এক ধরেনের আতংকের সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ ধারণা করছেন এটি গুটি বসন্ত। কিন্তু সিভিল সার্জন তা অস্বীকার করছেন।
সরেজমিনে কলমাকান্দা উপজেলার কৈলাটি ইউনিয়নের জামশেন ও নাওরীপাড়া গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে গতকাল শুক্রবার আবুল হাশেমের ৯ বছরের শিশুকন্যা জান্নাতুল মারা গেছে। এর আগে পর্যায়ক্রমে হাশেমের বোন নূরজাহানের কন্যা মাসুদা আক্তার (১০) ও পুত্র রফিকুল ইসলাম (৪) এবং পার্শ্ববর্তী বাড়ির রবন খাঁ (৭২) ও ফজলুল হক (৪৫) মারা গেছেন।
এ পর্যন্ত গুটি বসন্তের মতন অজ্ঞাত এ রোগে আক্রান্ত রয়েছে হাসিম উদ্দিনের ছেলে অলিউল্লাহ (৭), আলাল উদ্দিনের ছেলে আরিফ বিল্লাহ (৮ মাস), মুক্তার উদ্দিনের ছেলে সোহরাব মিয়া (১০), গুটি বসন্তে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণকারী রবণ খার ছেলে নূর ইসলাম (৮), নয়ন মিয়ার ছেলে সাগর (৮) জাকিয়া (২) ও তাদের মা হলুদা আক্তার (৩০), আবু তাহেরের মেয়ে হীরা মনি (৬) তার বোন নীলা মনি (৪), কালাম মিয়ার ছেলে শরীফ মিয়া (৬) মুক্তা আক্তার (৮) রেখা আক্তার (২১) রুখসানা (১০)-সহ বিভিন্ন বয়সের ১৫ জন।
ভুক্তভোগী আবুল হাশেম জানান, বাড়ির উঠানের সাথেই কমিউনিটি ক্লিনিক। কিন্তু এই পর্যন্ত তারা কোন খোঁজ খবরও নেয়নি। বাড়িতেও আসেনি। আমার মেয়েটা এক সপ্তাহ রোগে ভোগে শুক্রবার মারা যায়। তার বোন নূরজাহান জানান, আমার দুটি সন্তান এভাবে চোখের সামনে মারা গেছে। সরকারি কোন সেবাই এই পর্যন্ত পাইনি। কেউ আইসা কোন পরামর্শও দেয় নি। তাদের কাছে গেলে তারা গায়ে লাগায়নি। সরকারী কোন ডাক্তার আসে নাই। ঔষধও দেয় নাই। ক্লিনিকের ডাক্তার জুয়েলকে ইনজেকশন দিতে অনুরোধ করলেও সে দেয়নি।
এলাকার মুরুব্বী আক্রান্ত মো. লাল মিয়া ও আব্দুস সমেদ অভিযোগ করে বলেন, গত মাস দুয়েক ধরে এই গুটি বসন্ত হচ্ছে আর ভাল হচ্ছে। যে যার যার মত করে শহরে যাচ্ছে। রাস্থাঘাট যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভাল না যে তড়িৎ কোন ব্যবস্থা নিবে। এই কারণে আর বেশি সমস্যা। ফলে গ্রামের ৫ জন মারা গেছে। আরো ২২/ ২২ জন আক্রান্ত আছে। শহীদুল্লাহ বলেন, অজপাড়া গাঁ এটা। এখানে বিদুৎ নাই। ক্লিনিক থাকলেও তারা কোন কাজ করে না।
কৈলাটি ইউপি চেয়ারম্যান শামছুদ্দিন হেলালী বলেন, আমি এলাকার চেয়ারম্যান আমাকেই পর্যন্ত বিষয়টি এতদিন কেউ জানায়নি। আমি পরশু খবর পেয়েছি। এলাকার দুইজন বয়স্ক মানুষ মারা যাওয়ায় অনেকে প্রথমে ভেবেছে হয়তো শীতে মারা যেতে পারে। পরবর্তীতে ৩টি শিশু মারা যাওয়ায় সবাই খবর পেয়েছে। সাধারণ মুরুব্বীরা দাবি করেছেন এটি গুটি বসন্ত।
এদিকে, নেত্রকোনার সিভিল সার্জন ডা. বিজন কান্তি সরকার বলেন, এটি গুটি বসন্ত নয়। এটি এক ধরেনর ভাইরাস। আর ভুক্তভোগীরা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ফার্মেসী বা অন্যান্য চিকিৎসা নেয়ায় বিষয়টি এতদিন আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় হয়নি। গত নভেম্বর থেকেই এর প্রাদুর্ভাব শুরু হযেছে। গতকাল খবর পেয়েই আমাদের একটি বিশেষ টিম আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করে এসেছে। আলামত সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া আমাদের কর্মীবাহিনী মাঠে কাজ করছে।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৬ জানুয়ারি, ২০১৬/ রশিদা