বগুড়ায় নানা আয়োজনে নবান্ন উৎসব পালিত হয়েছে। গ্রামে গ্রামে স্বজনদের নিমন্ত্রণ, নতুন চালের রান্না, পিঠা পুলি আর দেশীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে পালিত হয়েছে নবান্ন উৎসব।
'হাতের মুঠোয় হাজার বছর আমরা চলেছি সামনে' এই স্লোগানকে সামনে নিয়ে বগুড়ায় কলেজ থিয়েটারের আয়োজনে সরকারি আজিজুল হক কলেজ ক্যাম্পাসে দিনব্যাপী পালিত হল এই পিঠা ও নবান্ন উৎসব।
পিঠা ও নবান্ন উৎসব উপলক্ষে সকালে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে এক আনন্দ পথযাত্রা বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে কলেজের মুক্ত মঞ্চে দিনব্যাপী এই উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সামস-উল আলম জয়। এছাড়াও নাটক, নবান্ন কথন, নৃত্য ও লোকজ গান পরিবেশন করা হয় এই উৎসবে। এছাড়া আদমদীঘি উপজেলার শালগ্রাম, কালাইকুড়ি, সাগরপুর, কালাগাড়ী, কৈকুড়ি, কোমারপুর, কোমারভোগসহ বেশ কিছু গ্রামে বাঙ্গালীর ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব লেগেছে।
এ উৎসব পালন উপলক্ষে প্রতিটি বাড়ীতে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে মেয়ে-জামাই, নাতি-নাতনি ও নিকটাত্মীয়দের। উৎসবটি পালন করা হচ্ছে ঈদের আমেজে। গ্রামের প্রতিটি বাড়ীতে রান্না করা হয়েছে উন্নতমানের খাবার। নবান্না উপলক্ষে গ্রামের প্রতিটি পাড়া মহল্লা ও মোড়ে মোড়ে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী চুড়ি-ফিতা, আলতা ও বাচ্চাদের খেলার সামগ্রী এবং জিলাপী, রসগোল্লা, চমচম, বাতাসা, মুড়কি ও পাঁপড় ভাজাসহ মুখরোচক নানান পণ্যের মেলা। পাশাপাশি প্রতিটি পাড়ায় তৈরী হতে দেখা যায় মঞ্চ। যেখানে রাতের বেলা বসবে জারি সারি আর পালা গানের আসর।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার শালগ্রাম গ্রামের রাস্তায় আব্দুল হামিদ নামের এক প্রবীন ব্যক্তি জানান, নবান্ন কোন ধর্মের নয়, এটা বাঙ্গালীর ঐতিহ্য। পূর্ব পুরুষরাও এ উৎসব পালন করেছে, আমরাও করছি। ছেলে-মেয়ে সাথে জামাই আর নাতি-নাতনি ও নিকটাত্মীয় নিয়ে নতুন ধানের চালে বিভিন্ন রকম রান্না করে স্বজনদের খাওয়ানো হয়। কেউ বা মিলাদ মাহফিলের আয়োজনও করে থাকে। একই ধরণের কথা বলেন, সিরাজুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান।
বগুড়ার আদমদিঘি উপজেলার কালাইকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা আদমদীঘি উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মহিত তালুকদার বলেন, পূর্ব পুরুষের আমল থেকেই উপজেলা এভাবে নবান্ন উৎসব পালন হয়ে আসছে। আর দিন দিন এ উৎসব পালনের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মোট কথা গ্রাম বাংলায় নবান্ন উৎসব পালন করা হয় অনেকটা ঈদের আমেজে।
১ অগ্রাহায়নে শুরু হওয়া এ উৎসব চলবে সারা মাস ব্যাপী। গ্রামের পাশাপাশি শহরে বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন আধুনিক উপায়ে এ সময়টাতে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করে। বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে নবান্নকে বরণ করা হয়েছে। এই উৎসব উদযাপন উপলক্ষে মঙ্গলবার সকালে উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম সরোয়ার জাহানের সভাপতিত্বে পরিষদ চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় নবান্নের আলোচনা সভা। আলোচনা সভা ছাড়াও পিঠা উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নানা শ্রেণী পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেন। নাচ, গান ও কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উদযাপিত হয় নবান্ন।
বিডি প্রতিদিন/১৫ নভেম্বর ২০১৬/হিমেল-১১