দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে এখনো মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। নেই দূরপল্লার পরিবহণ ব্যবস্থা । ফলে সম্ভাবনাময় এই স্থলবন্দরটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে পড়তে হচ্ছে অসহনীয় ভোগান্তিতে। প্রয়োজনীয় যোগাযোগের জন্য সবাইকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে গিয়ে কথা বলতে হচ্ছে।
দূরপাল্লার যাত্রী পরিবহণ ও মোবাইল নেটওয়ার্কের অভাবে সীমাহীন দুভোর্গ পোহাতে হচ্ছে পর্যটকদেরও।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা ও রংপুর বিভাগের সঙ্গে পরিবহণ ব্যবস্থা না ভাল না হওয়ায় পর্যটকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর জিরোপয়েন্ট থেকে বাংলাবান্ধা বাস টার্মিনালের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। বাস টার্মিনাল থেকে তেঁতুলিয়া সদরের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার এবং তেঁতুলিয়া থেকে পঞ্চগড় শহরের দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থলবন্দরের সঙ্গে পঞ্চগড় জেলা শহরসহ দিনাজপুর-রংপুরের দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনের জন্য আগত পর্যটকদের সড়ক পথে কোনো বাস সার্ভিস নেই। এমনকি রাজধানী ঢাকা ও রংপুর বিভাগের সঙ্গে দূরপাল্লার কোন যাত্রীবাহী ডে-কোচও নাই।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে নেটওয়ার্ক সংযোগ না পেয়ে পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন না আগত পর্যটক ও ব্যবসায়ীরা। অনেক পর্যটককেই নিদিষ্ট ঠিকানায় যোগাযোগ রক্ষা করতে না পেরে বিড়ম্বনায় ভুগতে দেখা গেছে।
স্থলবন্দর সূত্র জানায়, বাংলাবান্ধা থেকে ভারতের শিলিগুড়ির দূরত্ব ১০ কিলোমিটার, নেপালের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার ও ভুটানের দূরত্ব মাত্র ৬০ কিলোমিটার। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশনের পর ইতোমধ্যে চার দেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন হয়েছে। এই স্থলবন্দর থেকে চীনের দূরত্ব মাত্র ২০০ কিলোমিটার।
এছাড়াও, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ঘোষিত চার দেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দেশের অন্যান্য বাণিজ্যিক সীমান্তপথের স্থলবন্দরগুলোর মধ্যে বাংলাবান্ধা অন্যতম। বাংলাবান্ধা বন্দরের কাছেই ভারতের শিলিগুড়ি। সেখান থেকে রেল, আকাশ ও সড়কপথে ভারতের যে কোনো প্রান্তে অনায়াসে যাতায়াত সম্ভব। ব্যবসায়িক, পর্যটনসহ সব সুবিধা শিলিগুড়ি শহরে বিদ্যমান। ভারতের সেভেন সিস্টার খ্যাত রাজ্যগুলোতে প্রবেশের একমাত্র করিডোরও শিলিগুড়ির। এজন্য পর্যটকদের মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে এই স্থলবন্দর।
১৯৯৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর নেপালের সঙ্গে এই স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম বাণিজ্য কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ২০১১ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয় ভারতের সাথে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। গত ১ জানুয়ারি থেকে ভূটানের সঙ্গেও বাণিজ্য শুরু হয়েছে। গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে শুরু হয় পূর্ণাঙ্গ ইমিগ্রেশন কার্যক্রম। ফলে চতুর্দেশীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বপ্নের দুয়ার খুলে যায়। এর মধ্যে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক যাত্রী এই ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ব্যবহার করেছেন।
২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে ৩৩ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা ৪৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর প্রথম শ্রেণির স্থলবন্দর হিসাবে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম পুরোদমে চালু হলে রাজস্ব আয় আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সিএন্ড এফ এজেন্ট জাহাঙ্গীর আলম জানান, মোবাইল নেটওয়ার্কের অভাবে মারাত্মক অসুবিধায় পড়তে হয়। ইন্টানেট, ইমেইল ব্যবহারের সুবিধা নেই। এজন্য অনেক আমদানি-রফতানিকারক আসতে চায় না।
ব্যবসায়ী মোজাফ্ফর হোসেন জানান, নেটওয়ার্কের জন্য প্রচুর বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
বাংলাবান্ধা আমদানি-রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী হাসান বাবলা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দূরপাল্লার পরিবহণের জন্য যাত্রীরা নানা ধরনের সমস্যায় পড়ছেন। সম্প্রতি একটি মোবাইল কোম্পানি এখানে টাওয়ার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবে।
ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা কানন সরকার জানান, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও দূরপাল্লার পরিবহণ ব্যবস্থা না থাকায় এই স্থলবন্দরে এসে যাত্রীরা বিড়ম্বনায় পড়ে। বিদ্যমান সমস্যা দূর হলে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এই বন্দরের।
বিডি প্রতিদিন/৫ জানুয়ারি, ২০১৭/ফারজানা