রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এ বছর ব্যাপক চাষ হয়েছে ভুট্টার। আসছে উচ্চফলন। সবুজ পাতার আড়ালে হাসছে হলুদ রঙের ভুট্টা। প্রতিটি গাছে গাছে বাতাসে দোল খাচ্ছে এসব ভুট্টা। মাথায় লাল ফুল, গায়ে হলুদ বর্ণ। ভুট্টার হাসিতে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখেও।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উৎপাদন বেশি ও খরচ কম বলে ভুট্টা চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। তাছাড়া পাহাড়ি ভুট্টা স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে বাজারজাত হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায়। তাই ভাগ্য পরির্বতন হয়েছে পাহাড়ি মানুষের। ধান, গম ও তামাকের পরিবর্তে ভুট্টা চাষেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেক কৃষক পরিবার।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শুধু রাঙামাটি জেলা নয়, ভুট্টা চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে অপর দু’পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও বাদরবানে। পাহাড়ের জমিতে জুম চাষের পাশাপশি আবাদ হচ্ছে ভুট্টা। চলতি মৌসুমে রাঙামাটি জেলায় ২৫০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে ভুট্টা। রাঙামাটি জেলার রাইখালী, কাপ্তাই, কুতুকছড়িসহ বিভিন্ন পাহাড়ে পাহাড়ে ভুট্টার সমারোহ। পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষের কাছে ভুট্টা এখন প্রধান অর্থকরী ফসল।
কৃষকরা জানান, পাহাড়ে জুম চাষের পর ভুট্টা চাষটা বেশি গুরুত্ব পেয়েছে তাদের কাছে। ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য হিসেবে এবং ভুট্টার গাছ ও সবুজ পাতা উন্নত মানের গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবেও এর যথেষ্ট গুরূত্ব রয়েছ। একসাথে অনেকগুলো সুবিধার কারণে এ চাষে আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের।
অন্যদিকে কৃষি প্রনোদনায় বীজ ও সার পেয়ে চাষীরা ভুট্টার আবাদে এগিয়ে এসেছেন বলে দাবি করেন স্থানীয় কৃষিবিদরা।
রাঙামাটির উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শান্তিময় চাকমা জানান, আদিকাল থেকে পাহাড়ে জুম চাষের পাশাপাশি এ অঞ্চলের কৃষকরা ভুট্টা চাষ করে আসছে। উচ্চফলন, বেশি লাভ আর চাহিদা অনেক থাকায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভুট্টা চাষাবাদ বেড়েছে ব্যাপক হারে। রাঙামাটির পাহাড়ের ভুট্টার দানা এবং রং ভালো হওয়ায় বাজারেও চাহিদা অনেক। তাই স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চাষীদের কাছ থেকে সরাসরি ভুট্টা ক্রয় করছেন।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রমণী কান্তি চাকমা জানান, শুধু উৎপাদন বাড়ালেই হবে না, মাটির উর্বরতা যেন ঠিক থাকে এবং চাষীরা যাতে পরিকল্পিতভাবে ভুট্টার আবাদ করতে পারে সেদিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টিমান বেশি। এতে প্রায় ১১ভাগ আমিষ জাতীয় উপাদান রয়েছে। আমিষে প্রয়োজনীয় এ্যামিনো এসিড, ট্রিপটোফ্যান ও লাইসিন অধিক পরিমানে আছে। এছাড়া হলদে রংয়ের ভুট্টা দানায় প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৯০ মিলিগ্রাম ক্যারোটিন বা ভিটামিন "এ" থাকে।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ