মার্মা সম্প্রদায়ের বর্ষবরণ ও বিদায় উৎসব সাংগ্রাইকে ঘিরে পাহাড়ি কন্যা বান্দরবানে পাহাড়ি-বাঙালির মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। রবিবার সকাল থেকে জলকেলি খেলায় মেতেছে মারমা তরুণ-তরুণীরা। উৎসবে যোগ দিয়েছেন স্থানীয় বাঙ্গালী তরুণ-তরুণী ও দেশী-বিদেশী পর্যটকরা।
রবিবার স্থানীয় রাজার মাঠে সাংগ্রই উৎসবের জলকেলীর প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। এ সময় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ যুবায়ের সালেহীন, জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক, পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়, বান্দরবান পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ইসলাম বেবী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি জল ছিটিয়ে জলকেলি উৎসবের উদ্বোধন করেন।
অন্যদিকে ধর্মীয় উপসনালয়গুলোতে চলে ধর্ম দেশনা। শীল গ্রহন, বুদ্ধ পূজা দাণীয় দ্রব্য (মিষ্ঠান্ন, ফলমূল) দান, হাজার মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন সবশেষে চুলমনি জাদীর উদ্দেশ্যে ফানুস উড়িয়ে পুরাতন বছরকে বিদায় জানিয়েছেন বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা।
পানিকে বিশুদ্ধতার প্রতীক ধরে নিয়ে মারমা তরুণ-তরুণীরা একে অন্যকে পানি ছিটিয়ে নিজেদের পবিত্র করে নেয়। পুরোনো বছরের দুঃখ, কষ্ট, গ্লানিকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানায় তাঁরা। তবে জলকেলি প্রতিযোগিতায় শুধু অবিবাহিত তরুণ-তরুণীরা অংশ নেয়।
একাধিক তরুণ-তরুণীরা বলেন, এই উৎসবে আমরা তরুণ-তরুণীদের নিয়ে জলকেলি খেলা উপভোগ করে থাকি। জলকেলি সোমবারও চলবে।
এদিকে তরুণ তরুণীদের পাশাপশি শিশুরাও উৎসবে মেতে উঠেছে। শিশুরা দলবেঁধে টমটম, রিকশা ভাড়া নিয়ে শহরের রাস্তায় রাস্তায় পথচারী আর পর্যটকদের পানি ছিটিয়ে আনন্দ উপভোগ করেছে। অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে কিছু বিদেশিনীও।
উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি হ্লাগ্য চিং মার্মা, এটা আমাদের অন্যতম প্রধান একটি উৎসব। এই উৎসবে আমরা নানাভাবে আনন্দ করে থাকি। মূলত তিনদিন ধরে এই উৎসব চলে। আজ সাংগ্রাই উৎসবের প্রথম দিন। এদিনে আমরা জলকেলি খেলা খেলে থাকি। এ খেলায় ছেলে ও মেয়েরা নিজেদের পছন্দ মতো একে অন্যকে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিয়ে থাকে।
আরেকজন বলেন, আমাদের এই উৎসবের প্রধান খেলা হলো পানি খেলা। এর মাধ্যমেও আমরা ছেলে মেয়েরা উভয়েই আনন্দ করে থাকি।
সাংগ্রাই উৎসব উপলক্ষে মারমা সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে অতিথি আপ্যায়নে তৈরি করা হয় নানা রকমের মিষ্ঠান্ন পিঠা। সাধারণত বিভিন্ন ধরনের সবজি দিয়ে এ পাজন রান্না করা হয়ে থাকে।
এ উপলক্ষে পাহাড়ি পল্লীগুলোতে তরুণ-তরুণীরা সারিবদ্ধভাবে বসে হরেক রকমের পিঠা বা পুলি তৈরি প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে। সারা রাত পিঠা তৈরি করে পরের দিন সকালে পাড়ার প্রতিবেশী, আত্মীয় সজন ও ধর্মীয় উপশানলয়ে ভিক্ষুদের উদ্দ্যেশ্য পাঠানো হয়।
বিডি-প্রতিদিন/১৬ এপ্রিল, ২১০৭/মাহবুব